ছোট ভাইয়ের দোকান দখলে নিলো বড় ভাই

ছোট ভাইয়ের দোকান দখলে নিলো বড় ভাই

চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম প্লাটফর্মে বড় ভাই কর্তৃক আপন ছোট ভাইয়ের দোকান দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ৪ অক্টোবর ভুক্তভোগী ছোট ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে দুই ভাগে বিভক্ত দোকানটি নিয়ে বড় ভাই আমিনুল হক এবং ছোট ভাই খলিলুর রহমানের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। গত ১অক্টোবর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ খলিলুর রহমানের মালিকানাধীন অংশের দোকানটি সিলগালা করে স্যাঁটরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এই সুযোগে বড় ভাই আমিনুল হক রেল কর্তৃপক্ষের সিলগালা করা তালাবন্ধ স্যাঁটার রেখেই রাতের আঁধারে দোকানের মাঝখানের পার্টিশন ভেঙ্গে ভিতরের পুরোটা দখল করে নেন। অভিনব এই দখলকান্ডে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন এলাকায় ব্যাবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল বেপারীর পুত্র ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান জানান, ‘আমিনুল হক আমার আপন বড় ভাই। আমরা দুই ভাই মিলে ১৯৯২ সালে মৃত সিরাজুল হকের কাছ থেকে চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম প্লাটফর্মে একটি দোকান ক্রয় করি। পরবর্তীতে স্টাম্পের মাধ্যমে ৮/৮ স্কয়ার ফিটের দোকানটি ৪/৪ স্কয়ার ফিটে ভাগ করে আলাদা ভাবে ভাড়া দিয়ে ভোগদখল করে আসছি। সবশেষ আমার ভাড়াটিয়া সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে আমার বড় ভাইয়ের স্বাক্ষর রয়েছে। বড় ভাই নিয়মিত আমার কাছ থেকে রেলের খাজনার টাকা নিয়ে জমা দিতে। ফলে সেসব রিসিট এবং কাগজপত্র তার কাছে থাকতো। গত কয়েক বছর যাবত হঠাৎ করে ভাইয়ের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে। তিনি খাজনার টাকা নিয়ে অস্বীকার করেন। স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিগত সব টাকা পরিশোধ হয়েছে বলে আমাদের মাঝে লিখিত কাগজ হয়। এরপর ২০২১ সালে আমি খাজনার টাকা দিতে চাইলে বড় ভাই বলেন তিনি নাকি নিজের দামে দোকানের কাগজ করে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি স্থানীয় মুরুব্বী এবং রেলওয়ে কে অবগত করেছি। ‌

খলিলুর রহমান আরো জানান, সবশেষ গত ২০ আগস্ট রেলওয়ে থেকে ফোন করে আমাকে কাগজপত্র নিয়ে রেস্ট হাউসে দেখা করতে বলে। সেখানে টিয়াই মহিউদ্দিন মুকুল, স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন স্যারসহ বহিরাগত অনেক লোকজন উপস্থিত ছিল। টিআই স্যার আমার কাগজপত্র দেখে বলেন, এখন যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা আমি মেনে নিবো কি না। আমি তাদের উপর বিশ্বাস করে রাজি হই। এরপর তারা একটি কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে বলেন, এ দোকানের মালিক আমার বড় ভাই। আমি যেন দোকান ছেড়ে দেই। এরপর আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। আমি আসতে না চাইলে তারা আমাকে আটক করার ভয় দেখান। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর টিআই এবং স্টেশন মাস্টার উপস্থিত থেকে আমার দোকানে সিলগালা করে দেয়। এই সুযোগে সিলগালা অবস্থায় আমার বড় ভাই আমিনুল হক রাতের আঁধারে দোকানের মাঝখানের পার্টিশন ভেঙ্গে সমস্ত মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং দোকান দখল করে নেয়। আমি রেল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে এর সুবিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আমিনুল হক জানান, আমার বিষয়ে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। আমরা দুই ভাই দোকানটি একজনের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। কিন্তু খাজনা না দেওয়ায় আমাদের পূর্বের মালিকের লিজ বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আমি নিজের নামে রেলওয়ে থেকে দোকানের লিজ আনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন বলেন, এই দোকানটি ২০১৩ সালে আমিনুল হক নিজ নামে লিজ নিয়েছে। তার ভাইয়ের কাছ থেকে দখল বুঝে পেতে তিনি রেলওয়েতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেলওয়ে লাকসাম অঞ্চলের টিআই গত ৩০ সেপ্টেম্বর দোকানটির একাংশ সিলগালা করে দেন। সিলগালা অবস্থায় দোকান দখলের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

নিজস্ব প্রতিবেদক/৫ অক্টোবর ২০২৫

Explore More Districts