গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং আবাসিক হল থেকে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে পাঁচজন সিনেট সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ব্যাপারে সরাসরি অংশ নিতে পারেন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সময়ে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ছিল না। থাকলে তাঁদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হতো। প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও আন্তরিক হতে পারতেন।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়, সেটি নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য নানা রকম কৌশল ও কারচুপির আশ্রয় নেয়। কোনো কোনো আবাসিক হলে আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভোটারের সারিগুলোয় দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কৃত্রিম ভিড় তৈরি করেন, যাতে হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে না পারেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে একরকম নির্লিপ্ত থাকতে দেখা যায়।
ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের অনুসারী ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী হয় না। তারা বেশ জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের নির্বাচিত হওয়া অসম্ভবপ্রায়। ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে ক্যাম্পাসগুলোয় নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাস ও দখলদারত্ব যেমন বেড়েছে, তেমনি শিক্ষার পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা নেতিবাচক রাজনীতির ধারা ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারেও বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি-সচেতন নন, তাই এমন কথাও শোনা যায়।