ছাত্র সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছাত্র সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি কারও কাম্য নয় উল্লেখ করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, ‘সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারি ও অন্যান্য স্থান অবরোধ করে রাখে। মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি কারও কাম্য নয়। শিল্প-কারখানার সমস্যার কারণে ভবিষ্যতে কেউ যাতে মহাসড়ক অবরোধ করতে না পারে সে ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

রোববার (১০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর হাজারী গলিতে সংঘটিত ঘটনার কথা তুলে ধরে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে মিটিং করে সমস্যা সমাধান করতে চাই।’

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আটক করা অনিবন্ধিত গ্রামভিত্তিক সিএনজি অটোরিকশা ও ডকুমেন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন গাড়ি ডাম্পিং করার জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরবাই উপজেলায় ডাম্পিং স্টেশনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জায়গা খুঁজে জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা দিলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করলে একটি চমৎকার জেলা প্রশাসন উপহার দিতে পারবো।’

জেলা প্রশাসক সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বালি উত্তোলন, পাহাড় কাটা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, নারী ও শিশু নির্যাতন, রেল থেকে তেল পাচার, রেলপথ, নৌ-পথ ও সড়ক পথে মাদক পাচার রোধ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এবং বন্য হাতির উপদ্রব থেকে জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক।

সভায় জেলার নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান বলেন, ‘জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি শেষে থানাগুলোকে ঢেলে সাজিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের নির্দেশনা মতে পুলিশ কাজ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডসহ অন্যান্য অংশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই রোধে অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। অনিবন্ধিত গ্রাম সিএনজি ও ডকুমেন্টের মেয়াদোত্তীর্ণ অন্যান্য গাড়ি রাখার জন্য জেলা ট্রাফিক পুলিশের যখন ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন হবে তখন আমরা জায়গা নির্ধারণ করতে পারলেও জায়গা অধিগ্রহণের বিষয়টি আমাদের নয়। তবে বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুন্ডে ডাম্পিং তৈরী করার ব্যাপারে আমরা কাজ করতে পারি। ৫ আগষ্ট পরবর্তী সড়কে যানজট নিরসনে অনেকে ট্রাফিকের নির্দেশনা মানতে চায়নি, এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে এবং ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

এসপি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী থেকে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুঠ হয়েছে, কিছু কিছু উদ্ধার হয়েছে, যে সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি সেগুলো উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর বাহিনীর অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দেশের ৬৩ জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যারা নাশকতা ও হামলা চালিয়েছে তাদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছে সর্বাধিক ১ থেকে ৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। সঠিক ঘটনায় থানায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করবে না।’ তবে যারা ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তাদের মামলায় যুক্ত না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি-উর রহিম জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, মেট্রো এনএসআইর উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ, র‌্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.ইকবাল, কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের প্রতিনিধি লেঃ শাকিব মেহবুব, জেলা এনএসআই’র সহকারী মো. রেজাউল করিম, আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ আবু সোলায়মান, ৪৩ বিজিবি’র প্রতিনিধি সুবেদার মোঃ মশিউর রহমান, ৮ বিজিবি’র প্রতিনিধি নায়েক সুবেদার মো. মুনছুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী), মাহফুজা জেরিন (মিরসরাই), রিগ্যান চাকমা (সন্ধীপ), কে.এম রফিকুল ইসলাম (সীতাকুন্ড), আলাউদ্দিন ভূইয়া জনী (পটিয়া), রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলি), অংগাজাই মারমা (রাউজান), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), ইশতিয়াক ইমন (আনোয়ারা), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকার, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, মহানগর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো.রফিকুল্লাহ, বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের প্রভাষক মো. শাহ আলম, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন, মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. মফিজুল হক ভূইঁয়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মোঃ আশরাফ উদ্দিন প্রমূখ। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

Explore More Districts