বেইজিং, ১৮ অক্টোবর – চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে বরখাস্ত করেছে। একই সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনী থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। দেশটিতে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সামরিক বাহিনীর মধ্যে অন্যতম বড় অভিযান। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মারাত্মক আর্থিক অপরাধের জন্য ওই নয়জন সন্দেহের তালিকায় ছিল। এদের বেশিরভাগই তিন তারকা জেনারেল এবং পার্টির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফোরাম- কেন্দ্রীয় কমিটির অংশ ছিলেন।
এই জেনারেলদের বরখাস্তকে দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণের অংশ হিসেবেও এটি হতে পারে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ও নতুন সদস্যদের মধ্যে ভোটের জন্য দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্নাঙ্গ অধিবেশনের আগেই এই জেনারেলদের বরখাস্তের ঘটনা ঘটলো।
যে নয়জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন, হি ওয়েইডং-সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান, মিয়াও হুয়া-সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের ডিরেক্টর, হে হংজুন-সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর, ওয়াং জিউবিন- সিএমসির জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর, লিন জিয়াংইয়াং- ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার, কিন শুতং-সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার, ইয়ুআন হুয়াজি-নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার, ওয়াং হৌবিন-রকেট ফোর্সেস কমান্ডার এবং ওয়াং চুনিং-আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার।
এই নয়জনের মধ্যে হি ওয়েইডং চীনের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এরপর তিনিই সিএমসির চেয়ারম্যান।
তাকে গত মার্চে শেষ দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে জনসম্মুখে তার অনুপস্থিতির কারণে জল্পনা কল্পনা বাড়ছিলো যে শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব শুদ্ধিকরণের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ ফোরাম পলিটব্যুরোতেও ছিলেন। তিনিই পলিটব্যুরোর প্রথম সদস্য হিসেবে এ ধরনের তদন্তের আওতায় এলেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নয় ব্যক্তি দলের শৃঙ্খলার মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে এবং দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মারাত্মক অপরাধের দায়ে সন্দেহভাজন।
এতে বলা হয়, তারা এখন সামরিক বাহিনীর বিচারের মুখোমুখি হবেন এবং তাদের শাস্তি দল ও সামরিক বাহিনীর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন।
সিএমসি এ ধরনের অভিযানের ইঙ্গিত আগে থেকেই দিচ্ছিল। জুলাই মাসে তারা সামরিক বাহিনী থেকে দূষিত প্রভাব দূর করতে ও ক্যাডারদের জন্য অবশ্যই মেনে চলতে হবে এমন একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছিল।
চীনে এর আগেও সামরিক বাহিনীর মধ্যে ছোটো মাত্রায় কিছু শুদ্ধিকরণ অভিযান চালানো হয়েছিলো। যাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো তার মধ্যে সাবেক দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংঘে ও লি শাংফুও আছেন।
এদিকে রকেট ফোর্সের শীর্ষ জেনারেলদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও আগে ব্যবস্থা হয়েছে। এর মধ্যে বড় আলোচনায় ছিল ২০২৩ সালে তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি গ্যাংয়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। এরপর তার পরিবর্তে আসা লিউ জিয়ানচাউকেও জুলাই থেকে দেখা যাচ্ছে না।
চীনা রাজনীতি বিষয়ে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইন্সটিটিউট এর ফেলো নেইর থমাস বলেন, শি জিনপিংয়ের শুদ্ধিকরণের অর্থ হলো নিজের শক্তি প্রদর্শন। তার দৃষ্টিভঙ্গি হলো দুর্নীতিপরায়ণ ও অবিশ্বস্ত ক্যাডারদের বাদ দেয়া হলো পার্টির আত্ম-বিপ্লব যাতে করে সংগঠন পরিচ্ছন্ন, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর হয়, যা অনির্দিষ্টকাল দেশ শাসনে সক্ষম। তিনি বলেন এই শুদ্ধিকরণ শাসনব্যবস্থাকে আরও কঠোর করে তুলতে পারে। এখন অনেকের দৃষ্টি থাকবে ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কারা কারা অংশ নেয় সেটার ওপর।
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ১৮ অক্টোবর ২০২৫