চাঁদাবাজির মামলায় শ্রমিক লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার/পরিবারের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার

চাঁদাবাজির মামলায়  শ্রমিক লীগের  সভাপতি গ্রেপ্তার/পরিবারের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে শহরের হাসননগরের বাসভবন থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সেলিমের বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন দাবি করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাশসত তার ভাইকে মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিকাল চারটায় সুনামগঞ্জ বিচারালয়ের তাহিরপুর আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট মোহাং হেলাল উদ্দিনের আদালতে সেলিমকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। একইসঙ্গে সেলিমের পক্ষেও জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। আদালত বুধবার রিমান্ড ও জামিন শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত ১২ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা রাজা মিয়ার ছেলে অলিউর রহমান বাদী হয়ে সেলিম আহমদের চাচাতো ভাই তারেক আহমদ, মোর্শেদ আলম, তানভির আহমদ, সোহাগ, লতিফ, পলাশ, আব্দুল হকের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন আসামী দিয়ে তাহিরপুর থানায় অপহরণ করে হত্যার প্রচেষ্টা এবং চাঁদাবাজি’র মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অলিউর রহমান উল্লেখ করেন, ১০ লাখ টাকার চাঁদার দাবি পূরণ না করায় দুটি স্পীডবোটে ১৪-১৫ জনের সংঘবদ্ধ দল বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় তাহিরপুরের সংসার হাওরের জেটি থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে তিনিসহ তিনজনকে অপহরণ করে সারা রাত নির্যাতন করা হয়। পরে প্যাডে, সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করা হয়।
এই মামলায়ই সেলিম আহমদকে আটক করা হয়েছে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
কোর্ট ইন্সপেক্টর বোরহান উদ্দিন জানান, পুলিশ সেলিম আহমদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায়। সেলিমের আইনজীবীরাও তার জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রিমান্ড ও জামিন শুনানীর জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁওয়ের বাসিন্দা সেলিম আহমদ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি। জেলার বৃহৎ বালু পাথর মহাল ফাজিলপুরের ইজারাসহ কয়লা ও পাথর আমদানীকারক তিনি। সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের উর্ধ্বতনরা। এই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী সেলিম।
সোমবার তাহিরপুরে জাতীয় শোক দিবসে দলীয় কর্মসূচি পালন হয়েছে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে। একপক্ষের প্রধান সংগঠক ছিলেন সেলিম আহমদ। অপরপক্ষের শোক দিবসের কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এই সমাবেশকে ঘিরে প্রকাশ্যে বিভক্ত হয় তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ।
সোমবারের সমাবেশের পর ভোরেই সেলিম আহমদ গ্রেপ্তার হবার বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: গ্রেপ্তার বলেছেন সেলিমের বড় ভাই তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
নিজাম উদ্দিন বললেন, সেলিম বছরে ১৬ কোটি টাকা রাজস্ব দেন। বিগত বন্যায় জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। বন্যার্তদের সহায়তা করেছেন কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা। চাঁদাবাজি মামলার এজাহারে তার নামোল্লেখ নেই। তবুও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক পরিবারে আমার চাচা দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি দুই বার হয় চেয়ারম্যান। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। তারাই ষড়যন্ত্র করে এই মামলা, গ্রেপ্তার সবকিছুই করিয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বললেন, সেলিম আহমদ বা তার পরিবার আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। মঙ্গলবার দুপুরে আমি সেলিম আহমদের গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়েছি। শুনেছি একটি চাঁদাবাজির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদীর দাবি সত্য হলে তিনি দায়ী হবেন, না হয় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এই বিষয়ে এর বেশি তার বলার নেই বলে মন্তব্য করেন।

Explore More Districts