চাঁদপুর শহরে বাড়ছে মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর আশঙ্কা

চাঁদপুর শহরে বাড়ছে মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর আশঙ্কা

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে সঠিকভাবে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে শহরবাসীর পক্ষ থেকে। শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই সন্ধ্যা নামার পর থেকেই মশার অত্যাচার সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে করে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরের আশঙ্কা।

গত কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার পক্ষ থেকে মশা নিধনের ঔষধ না দেয়ার কারনে বর্তমানে মশার মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। মশার যন্ত্রনায় বাসা বাড়ি, কিংবা দোকান পাটে কোথাও ঠিকমতো বসা যায়না। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ছেলে মেয়েরা পড়তে বসলেও মশার কারনে তারা ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছেনা। গত ২/৩ মাস ধরে মশার যন্ত্রনায় অনেকেই চাঁদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মশা নিধনের কোন প্রকার ঔষধ দেয়নি বলে অভিযোগ করছেন। কিংবা মশা নিধনের তেমন কোন কার্যক্রমও তাদের চোখে পড়েনি বলে জানান।

চাঁদপুর পৌরসভার আওতাধীন মোট ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এরমধ্যে মিশন রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক, মাদরাসা রোড, চেয়ারম্যানঘাটা, নাজিরপাড়া, পালপাড়া, প্রফেসর পাড়া, নতুন বাজার, উকিল পাড়া, আদালত পাড়া, গাঙ্গুলী পাড়া সহ অনেক এলাকাতেই গত ৫/৬ মাস ধরে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা নিধনের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে একসময় নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হতো। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পরপরই দোকানপাট, বাসাবাড়ি এমনকি রাস্তাঘাটেও মশার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং রোগীরা মশার কামড়ে রীতিমতো নাজেহাল।

বটতলা এলাকার সাখায়াত হোসেন, সালাউদ্দিন খান, চুন্নু খান, মিশন রোড এলাকার কাদির খান, নয়ন খান, মামুন মিজি, নাজির পাড়ার কাউসার দেওয়ান, মিন্টু দেওয়ান, নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল সহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তিরা জানান, আগে অন্তত দুই একমাস পর হলেও একবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা নিধনের ঔষধ ছিটানো হতো। এখন কয়েক মাস হয়ে গেল, আর কোনো মশার ঔষধের গাড়ি দেখি না। মশার কারণে বসে থাকা, খাওয়া, ঘুম, সবই দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

এদিকে মশার উপদ্রবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। অনেকে বাসা বাড়িতে মানুষজন জ্বরে ভুগছেন। অনেকে জ্বরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিধন কার্যক্রমে অবহেলা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা, বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকা, টায়ার, টব, ডাবের খোসার মতো জায়গায় পানি জমে থাকা, এসবই ডেঙ্গু প্রজননের ক্ষেত্র তৈরি করে। তাই বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক মোঃ গোলাম জাকারিয়ার বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে না হয়, সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে কিছু কিছু ওয়ার্ডে মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো শুরু করেছি। তবে বৃষ্টির কারণে মাঝে মাঝে ওষুধ ছিটানো বন্ধ রাখতে হয়। বৃষ্টির দিনে ঔষধ ছিটানো কার্যকর হয় না, বরং অপচয় হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি যে ওয়ার্ডে বেশি মশার প্রাদুর্ভাব, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা শীঘ্রই শহরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করবো। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ওষুধ ছিটানো কার্যক্রমও নিয়মিত করা হবে।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৮ জুলাই ২০২৫

Explore More Districts