চাঁদপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবে বিএনপি ছিল সম্প্রীতির অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায়

চাঁদপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবে বিএনপি ছিল সম্প্রীতির অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায়

চাঁদপুরের রাত তখন আলোকমালায় ঝলমল করছে। রঙিন বাতির ঝিকিমিকি আলোয় নেচে উঠছে শহরের প্রতিটি অলিগলি। ঢাকের তালে, শঙ্খের ধ্বনি, আর পূজা মণ্ডপের আরতি-সন্ধ্যার দীপশিখায় শহর যেন জেগে আছে এক অন্যতর আনন্দে। এই আনন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। এটি কেবল ধর্মীয় কোনো উৎসব নয়, বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাম্য, ভাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির মহাসমারোহ– মিলনের উৎসব। সেই উৎসবকে শান্তিপূর্ণ করতে এবার চাঁদপুরের প্রতিটি পূজা মণ্ডপে ‘সম্প্রীতির অতন্দ্র প্রহরী’ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভিন্ন এক শক্তি। সেই শক্তির নাম চাঁদপুর জেলা বিএনপি।

“আপনারা স্বাচ্ছন্দ্যে পূজা করবেন, পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা আপনাদের পাশে থাকবে”—দুর্গোৎসব শুরুর আগেই এমন অঙ্গীকার করেছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। জেলা বিএনপির সর্বোচ্চ এই অভিভাবকের দেয়া প্রতিশ্রুতির সেই বাণী শুধু কথায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, শতভাগ বাস্তব রূপ নিয়েছে।

পূজা চলাকালীন প্রতিটি মণ্ডপেই ছিল জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক উপস্থিতি। কারও হাতে ছিল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব, কেউ অতন্দ্র প্রহরী মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন পূজা মণ্ডপের প্রাঙ্গণে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যানজট নিরসনে সকাল থেকে রাত অবধি দায়িত্ব পালন করেছে– বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে চাঁদপুর পৌর বিএনপির প্রতিটি ইউনিট। পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করেষ্ট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন খান আকাশের উদ্যোগে গড়ে ওঠা “ক্লিন চাঁদপুর” এর ব্যানারে যুবদলের অসংখ্য কর্মী নিয়মিত মাঠে থেকে যানজট নিরসনে কাজ করে গেছেন। তাদের সম্মিলিত এই উদ্যোগ হিন্দু সম্প্রদায় হিন্দু সম্প্রদায় তথা চাঁদপুরবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ পূজারীরা তাই আনন্দভরা কণ্ঠে বলছেন— ‘শেখ ফরিদ আহমেদ তার দেয়া কথা রেখেছেন’।

চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট এলাকার পূজারী শর্মিষ্ঠা দে বললেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম স্বাভাবিকভাবেই উৎসব পালন করব, কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের এই আন্তরিকতা আমাদের চোখে জল এনে দিয়েছে। এবারের দুর্গা পূজায় তারা যেন আমাদের পরিবারেরই অংশ ছিল।’
চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপে আসা আরেকজন তরুণ পূজারী রঞ্জিত পাল বলেন,
“ চাঁদপুর পৌর বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখেছি রাস্তায় রাস্তায় যানজট সামলাতে। এটা দেখে মনে হয়েছে এরা শুধু রাজনীতি করে না, সমাজকেও নিজের বলে মনে করে। আমরা তো এমন বিএনপিই দেখতে চাই’।
চাঁদপুর পূজা উদযাপন পরিষদের এক নেতা বলেন, “আমরা প্রশাসনের নিরাপত্তা পাই সব সময়ই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর এমন মানবিক ভূমিকা সত্যিই বিরল।’

এই উৎসবে তাই প্রতিমার চোখের আলোয় যেমন প্রতিফলিত হয়েছে দেবীর শক্তি, তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে সম্প্রীতির জ্যোতি। ধর্মকে অতিক্রম করে মানবিকতার যে ছবি জেলা বিএনপি তুলে ধরেছে, তা চাঁদপুরবাসীর মনে নতুন আস্থা জাগিয়েছে।

সাধারণ মানুষের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে সেই প্রত্যাশা— “আমরা এমন বিএনপিকেই দেখতে চাই, যাদের কাছে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান– সব ধর্মের মানুষ সমান নিরাপদ থাকবে।”

এ যেন শুধু রাজনীতি নয়, মানবিকতার নতুন সংজ্ঞা। দুর্গোৎসবের এই আনন্দময় দিনে চাঁদপুর দেখল সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত—যেখানে ঢাকের শব্দ, শঙ্খের ধ্বনি আর মানবিকতার মেলবন্ধনে রচিত হলো ভিন্ন এক উৎসবের মহাকাব্য।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/ ৩ অক্টোবর ২০২৫

Explore More Districts