চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর, পাবনা : পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোর অপেক্ষাকৃত নিচু জমিগুলোতে এক সময় ইরি-বোরো ধানের আবাদ হতো। বিল থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর এ এলাকার কৃষকেরা বোরো চারা রোপণের পূর্ব পর্যন্ত হাজার হাজার হেক্টর জমি মাস দুয়েক পতিত রাখতো।

বিগত প্রায় দেড় যুগ যাবত অধিকাংশ কৃষক এসময় টুকু জমি পতিত না রেখে বাড়তি ফসল হিসেবে উচ্চ ফলনশীল সরিষার চাষ করছেন। তাই কালের বিবর্তনে বিপ্লব ঘটেছে এ এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে। সরিষা চাষ করে কৃষক যে উদ্বৃত্ত অর্থ উপার্জন করছেন তা দিয়ে অনায়াসে তাদের বোরো চাষের খরচ উঠেও কিছু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এ এলাকায় ব্যাপক পরিমান জমিতে সরিষা চাষ হওয়ায় তা ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমাতেও ভূমিকা রাখছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাবনার-চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের-তাড়াশ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর, নাটোরের-সিংড়া, গুরুদাসপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরের কিছু কম বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়।

এ এলাকার কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার হাজার হাজার কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ করেছেন। চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকার সরিষা খেতগুলো হলুদ ফুলে ফুলে একাকার হয়ে গেছে। সরিষা গাছগুলো ৫ থেকে ৬ পাতা হওয়ার সময় কিছু এলাকার জমিতে পোকার আক্রমন হলেও কৃষকরা আশা করছেন, এবার বাম্পার ফলন হবে। পোকা মাকড়ের আক্রমন রোধে কৃষকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর কৃষি অফিসের কর্মকর্তারাও সজাগ থাকায় অতি দ্রুত তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

চাটমোহরের নবীন গ্রামের কলেজ শিক্ষক আব্দুল খালেক চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি জানান, এ এলাকার কেউ জমি চাষ করে সরিষা বপন করেন আবার কেউ কেউ বিনা চাষে পতিত জমিতে বীজ ছিটিয়ে সরিষা আবাদ করেন। বিঘা প্রতি প্রায় ৭ মন হারে ফলন পাওয়া যায়। এবার মৌসুমের শুরুতেই সরিষার খেতে পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা গেছে।

হান্ডিয়ালের সোনাবাজু এলাকার খালেক মোল্লা জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন।

তাড়াশের দক্ষিণ শামপুর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, বিল থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর এ এলাকার কৃষকেরা সে জমিতে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বিঘা প্রতি প্রায় ৭ মন হারে ফলন পাওয়া যায়। পনেরো-বিশ বছর যাবত এ এলাকায় এভাবে সরিষা চাষ করে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন।

চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে ৩ হাজার টাকা খরচ হয় এবং প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।

চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে কেবল চাটমোহরেই ৬২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন পাওয়া যায় ১.২ (এক দশমিক দুই) টন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে আছে। আশা করা যাচ্ছে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।

খেতে পোকার আক্রমন হলে তা বন্ধে কৃষকেরা যদি কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন তাহলে ফলন কম হতে পারে। চলনবিল এলাকায় সরিষা মৌসুমে অনেক মৌচাষী মধু সংগ্রহের লক্ষ্যে মৌবক্স স্থাপন করেন। ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করায় সরিষার ফলন ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেড়ে যায় যা কৃষকের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ।

Explore More Districts