চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ বাইপাস সড়কের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে আবারও চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই সড়কের প্রায় সবগুলো বিদ্যুতের খুঁটিই বিপজ্জনকভাবে একদিকে হেলে রয়েছে। এই ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেকোনো মুহূর্তে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে, যা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা থেকে শুরু করে বহু মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরজমিনে দেখে গেছে, ওই সড়কের পাশে থাকা সমস্ত খুঁটিতেই তারগুলো শুধুমাত্র একটি পাশ দিয়ে টানা হয়েছে। এই একমুখী টানের কারণে প্রতিটি খুঁটির ওপর স্থিরভাবে একটি চাপ তৈরি হচ্ছে, যা খুঁটিগুলোকে ধীরে ধীরে তাদের গোড়া থেকে উপড়ে ফেলে একটি নির্দিষ্ট দিকে ঝুঁকিয়ে দিচ্ছে। এটি খুঁটিগুলোর ভারসাম্যকে স্থায়ীভাবে নষ্ট করছে, যার ফলে সামান্য ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও খুঁটিগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ বাইপাস সড়কটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটি গুলো একদিকে হেলে রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খুঁটির তারগুলো সবগুলো একপাশে টানা থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে। খুঁটির উপরের দিকে সবগুলো তারের টান একই দিকে থাকার কারণে খুঁটির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ সেটি প্রতিনিয়ত মাটির দিকে আরও ঝুঁকে পড়ছে।
এই সড়কের সকল খুঁটিতেই ঝুঁকি থাকলেও, স্থানীয়দের মতে মিশন রোড থেকে দর্জিঘাট এলাকা পর্যন্ত সড়কের এই অংশেই ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় এখানে জনসমাগম ও যানবাহনের চলাচল অনেক বেশি। মারাত্মকভাবে হেলে থাকা খুঁটিগুলো পথচারী এবং বাইপাস সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আসছে।
এই ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলোর ঠিক পাশেই বসবাস করেন বহু মানুষ। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও পথচারী এই সড়কের নিচ দিয়ে চলাচল করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খুঁটিগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেও বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়।
স্থানীয় এলাকার একাধিক বাসিন্দারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েক বছর আগেও এই প্রতিবেদক ঝুঁকিপূর্ন বিদ্যুৎতের খুঁটিগুলো নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার পর কর্তৃপক্ষ তা ঠিক করেছিল, কিন্তু আবার যেই লাউ সেই কদু! কর্তৃপক্ষ আমাদের জীবন নিয়ে কেন এত উদাসীন?
তারা যদি তার টানার কৌশলটা পরিবর্তন না করে, তবে বছর বছর খুঁটি সোজা করলেও ফল একই হবে। এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও এই সড়কের কিছু খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ হলে কর্তৃপক্ষ মেরামতের কাজ করেছিল। কিন্তু সমস্যার মূল কারণ, অর্থাৎ তার টানার কৌশল পরিবর্তন না করায়, আজ পুরো লাইনটিই আবার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটি কর্তৃপক্ষের সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রবণতা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে উদাসীনতাকে স্পষ্ট করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি একটি খুঁটির তারের টান একপাশে থাকে, তবে তার পরের খুঁটিতে অবশ্যই বিপরীত দিকে টান দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এই কৌশল অবলম্বন না করে একই দিকে টানা হলে, সেটি সাময়িক মেরামতের পরেও বারবার একই অবস্থায় ফিরে আসবে।
জনস্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চাঁদপুরের সর্বসাধারণের পক্ষ থেকে জরুরি আবেদন, সার্বিক পরিদর্শন ও স্থায়ী মেরামত অবিলম্বে পুরো বাইপাস সড়ক জুড়ে, বিশেষ করে মিশন রোড থেকে দর্জিঘাট পর্যন্ত বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পরিদর্শন করা হোক এবং শুধুমাত্র সোজা না করে, স্থায়ীভাবে তার টানার কৌশল পরিবর্তন করে খুঁটির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যাপক ঝুঁকি আর তৈরি না হয়।
যেহেতু প্রায় সবগুলো খুঁটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তাই কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এই বাইপাস সড়কটি শহরের বহু মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের পথ। সামান্য ভুলের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত এবং টেকসই সমাধান এখন সময়ের দাবি।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি/
১৬ নভেম্বর ২০২৫

