চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত নির্দিষ্ট হারের অতিরিক্ত ৪ গুণ স্টোর রেন্টের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ। আজ (২৪ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি এহসান এ খান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বন্দর বা আইসিডি থেকে মালামাল খালাসে বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও আরও অন্যান্য এজেন্সির সম্পৃক্ততা থাকে। এছাড়া ডকুমেন্টেশন প্রসেসিংয়ে অনেক সময় লেগে যায়। ফলশ্রুতিতে আমদানি পণ্যের চারগুণ বিলম্বের মাশুল আদৌ যৌক্তিক নয়। তাই বিষয়টি চারগুণ স্টোর রেন্ট বা বিলম্ব মাশুলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। ।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১০ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে এবং কমলাপুর আইসিডিতে স্থিত আমদানিকৃত এফসিএল কন্টেনারের কমন ল্যান্ডিং ডেটের অষ্টম দিন হতে প্রযোজ্য স্ল্যাবের চারগুণ হারে ‘স্টোর রেন্ট’ আরোপ করেছে। সিদ্ধান্তটি এমন সময় কার্যকর করা হয়েছে যখন দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জন্য সরকারিভাবে ৯দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীদেরকে এ সময়ে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছুটি প্রদান করা হয়ে থাকে।
ফলে ঈদের ছুটির ১/২ দিন আগে থেকে আগত কন্টেনারসহ ছুটির মধ্যে বন্দরে আগত কন্টেনার নির্ধারিত ৪ দিনের মধ্যে খালাস করা সম্ভব ছিল না। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে আরোপিত ‘স্টোর রেন্ট’ বাতিলের জন্য নৌ পরিবহন উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করার পরও তা বাতিলের জন্য কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, আমরা মনে করছি-এই ‘স্টোর রেন্ট’ বাতিল করা দরকার। কারণ আমদানীকারদের এমন অযৌক্তিক উচ্চহারে ‘স্টোর রেন্ট’ আরোপের ফলে শিল্পোৎপাদন বা অভ্যন্তরীণ ব্যবহার উভয় ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের শুল্কনীতি পরিবর্তনের কারণে আমাদের রপ্তানি খাতগুলো বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নে তাদের রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য যখন নানা উপায় খুঁজছে ঠিক সে সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এরূপ হঠকারি সিদ্ধান্ত জাতীয় রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ ভোগ্য পণ্যের মূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠন করে গত ৫ মে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ জারি করে। সরকারের রাজস্ব খাতে এ ধরনের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এছাড়াও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের রাজস্বখাতে সংস্কারের বাস্তবমূখী এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায় শৃঙ্খলা, দূর্নীতি হ্রাস ও কর ফাঁকি রোধে সরকার সফল হবে বলে আমাদের এসোসিয়েশন মনে করে। সরকারের রাজস্ব খাতে এ ধরণের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে এনবিআর এবং কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ধর্মঘট বা কলম বিরতি পালন করছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সময় মতো মালামাল খালাস করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। পোর্ট ডেমারেজ বা বিলম্ব মাশুল হিসাবে বিপুল অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়াও ঈদসহ বিভিন্ন সরকারী ছুটির কারণে দ্রুত মালামাল ডেলিভারি নিতে পারছেন না বিধায় সুষ্ঠু ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ বেলাল বলেন, কোনো ব্যবসায়ীরা চান না, তার পণ্য বন্দরে পড়ে থাকুক। পণ্য খালাস করতে গেলে এখানে আমরা অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে পড়ি। ফলে পণ্য যথাসময়ে খালাস করতে পারি না। এখন পোর্ট ডেমারেজ চার গুণ করার কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ হয়ে গেছে। এখন কাস্টমস কর্মকর্তারা কলম বিরতি পালন করছেন, বিষয়টিতো আমাদের হাতে নাই। এখন শুল্কায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এটার জন্য পোর্ট ডেমারেজ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাই আমরা চারগুণ স্টোর রেন্ট বাতিল চাই। এটি আগের মতো করা হোক।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন, পরিচালক মো. আরিফ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মো. কুতুব উদ্দিন, চট্টগ্রাম কাগজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক আহম্মদ সেলিম প্রমুখ।