
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন শহীদ নগর এলাকায় তৈয়বিয়া হাউজিংয়ে অবস্থিত ‘খোরশেদ ম্যানশন’ নামে একটি ৪ তলা ভবন কিছুটা হেলে পড়েছে । শনিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার পর এ ঘটনা ঘটে। ভবনটি হেলে পড়ায় ভবনের বাসিন্দাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিটের সদস্যরা খবর পেয়ে দ্র্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় ওই ভবনের আটটি পরিবারের সদস্যদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস বায়েজীদ ষ্টেশনের কর্মকর্তা কর্মকর্তা হারুন পাশা ও ওই ভবনের মালিক দাবি করছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে কাজ করার সময় ভবনের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত খালটি খনন করতে গিয়ে ভবনের নিচের অংশের মাটি ধ্বসে পড়ে। এতে করে খোরশেদ ম্যানশন নামে ওই ভবনটির দুটি পিলারও ভেঙ্গে গিয়ে ভবনটি হেলে পড়ে। ভবনটি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা হারুন পাশা জানিয়েছেন- শুধু এই ভবনটি নয়, এর পাশে থাকা আরো একটি পাঁচতলা ও তিনতলা ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সে দুটি ভবনে বসবাসরত লোকজনকেও সরানো হচ্ছে।
ভবনটির মালিক দাবি করেছেন, তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ম নীতি মেনেই এই ভবনটির নির্মান কাজ করেছেন। তার ভবনটির পাঁচতলা পর্যন্ত করার অনুমোদন থাকলেও তিনি চারতলা পর্যন্ত করেছেন। ২০০৭ সালে নির্মাণের পর থেকে তার ভবনের কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন তার ভবনের পেছনে অবস্থিত খালের মাটি কাটার ফলে ওই ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটে। অবশ্য জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উননয়ন কর্তৃপক্ষের হলেও সে কাজটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।
এই ভবন হেলে পড়ার ব্যাপারে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পূর্ত কাজের প্রকল্প পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিগ্রেডের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শীতল ঝর্না খালে প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে যে ভবনটি হেলে পড়েছে সেটির পিছনের দেয়াল খালের জিরো লাইনে। খালের কাজ শুরুর আগে ভবন মালিককে আমরা বলেছি ওয়ার্কিং স্পেস দিতে। তিনি রাজি হননি। বরং তিনি লিখিত দিয়েছেন কাজের জন্য তিনি জমি ছাড়বেন না। ভবনের কিছু হলে দায়িত্ব তার।
ভবন মালিকের কাছ থেকে লিখিত পাওয়ার পর খালের মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, এরপরও আমরা খালের অংশে শিট পাইল দিয়েছি। তারপর মাটি কাটার কাজ কেবল শুরু করা হয়েছে। তখন ওই ভবনের দুটি কলাম ফেইল করেছে। এতে ভবনটি হেলে গেছে। ওই ভবনটির ফাউন্ডেশন (ভিত্তি) খালের তলা থেকে অনেক উপরে হওয়ায় এবং ফাউন্ডেশন দুর্বল হওয়ায় সেটি হেলে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।
অবশ্য ভবন মালিক মো. খোরশেদও শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, তিনি খালের কাজ শুরু করার আগে আন্ডারটেইকেন (মুচলেকা) দিয়েছেন যে- কাজ করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তার দায়ভার তার নিজের। এদিকে ভবনটি এখন প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত সিদ্ধান্তের পরই হেলে পড়া ভবনসহ আশপাশের ভবনগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এসি