চট্টগ্রামে অবরোধের ২য় দিনে বাস-ট্রাকে আগুন-ভাংচুর, যুবক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে অবরোধের ২য় দিনে বাস-ট্রাকে আগুন-ভাংচুর, যুবক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে অবরোধের ২য় দিনে বাস-ট্রাকে আগুন-ভাংচুর, যুবক গ্রেপ্তার

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। নগরীর কোতোয়ালী এলাকা থেকে ককটেল ও পেট্রোল বোমাসহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সীতাকুণ্ডে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় আগুন লেগে একটি লরির চালক ও সহকারী আহত হয়েছেন। লরিটিও আগুনে বেশ পুড়ে গেছে। এদিকে অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। তবে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ ছিল না। দূরপাল্লার কোনও বাসও ছেড়ে যায়নি চট্টগ্রাম থেকে। নগরের আন্তঃজেলা টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে বাস ও চেয়ারকোচের সারি।

বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া ব্রিজ এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে এবার চোরাগোপ্তা নয়, প্রকাশ্যে ভাংচুরের পর বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ‘অবরোধকারীরা’। এতে বাসটির চালক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক আহত হয়েছেন। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কর্ণফুলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পটিয়ার দিক থেকে আসা কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জহির হোসেন বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে বাসটি পটিয়ার দিকে যাচ্ছিল। ভেল্লাপাড়া ব্রিজের কাছে আনুমানিক ৩০-৪০ জন গিয়ে আকস্মিকভাবে সেটি ভাংচুর শুরু করে। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত নেমে যেতে সক্ষম হয়। এরপর অবরোধকারীরা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসচালক ও সহকারী দ্রুত নেমে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। জড়িতদের শনাক্ত করতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোলবোমার আঘাতে সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন একটি লরির চালক ও সহকারী আহত হয়েছেন। বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে পৌরসভার পনথিছিলা এলাকায় মোটরসাইকেলে করে দুজন দুর্বৃত্ত এসে এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ভূমি মো. আলাউদ্দিন, সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদসহ বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে লরিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুড়ে যাওয়া গাড়িটি সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম এমপির বলে জানান তার ব্যক্তিগত সরকারি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি জানান পেট্রোল বোমা হামলায় গাড়ির চালক এবং হেলপার আহত হন। সীতাকুণ্ড এলাকার সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, জামায়াত-বিএনপি সারাদেশে অগ্নি সন্ত্রাস চালাচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তবে তাদের ভয়ে কোন কাজ হবে না, রাস্তায় গাড়ি চলবে। একটা না আমার দশটা গাড়ি পুড়িয়ে দিলেও গাড়ি চলা বন্ধ হবে না।

এছাড়া বুধবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের চৌধুরী গোট্টা এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গাছ কেটে ব্যারিকেড দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে সেখানে আসা দুটি খালি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। পুলিশ জানায়, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের আগুন নেভায়। পরে সড়ক থেকে গাছ কেটে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

অন্যদিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার কদমতলী এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এসময় ওই এলাকা থেকে ককটেল ও পেট্রোল বোমাসহ তৌহিদুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় এ অবরোধে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, দুপুরে ছাত্রদল, যুবদল এবং শ্রমিক দলের ২৫-৩০ জন কর্মী অবরোধে নাশকতার উদ্দেশ্যে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে। কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, দুপুরে প্রায় একসাথে ২৫-৩০ জন কর্মী নাশকতার উদ্দেশ্যে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় টহল পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, এ সময় তৌহিদুল ইসলাম আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশে তল্লাশি করলে ১টি অবিস্ফোরিত ককটেল ও ২টি অবিস্ফোরিত পেট্রোল বোমা জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মীরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট এলাকায় সকাল ৬ টার দিকে টায়ার জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। জোরারগঞ্জ থানার ওসি মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ভোরে অবরোধকারীরা রাস্তার পাশে একটি দোকান থেকে টায়ার নিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়।

এদিকে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যের কয়েকটি টিম টহল শুরু দেয়। নগরের প্রায় সবকটি পয়েন্টে পুলিশ সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সকাল থেকেই চট্টগ্রাম থেকে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল সীমিত ছিল। নগরের বিআরটিসি বাস টার্মিনাল, শুভপুর বাস স্ট্যান্ড, কদমতলী বাস স্ট্যান্ড, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু এলাকা, একে খান মোড়, অলংকার, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব যানবাহন ছেড়ে যায়নি। অবরোধের জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হওয়া মানুষকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পাশাপাশি অনেককেই বাসের জন্য মহাসড়কে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে ট্রেন চলাচল করছে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলির রাস্তায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মিনিবাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, গণপরিবহনের সংখ্যা কম। যাত্রী নেই। মানুষ আতঙ্কে আছে। যাত্রী কম থাকায় চালক-হেল্পার মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। নিরাপত্তার শঙ্কায় চলছে না দূরপাল্লার বাস।

এসি

Explore More Districts