বিশেষ প্রতিনিধি
বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া-কলেরা মোকাবেলার পর এবার ‘ভাইরাল ফ্লো ও ইনফ্লোয়েঞ্জা মোকাবেলা করছেন সুনামগঞ্জের বানভাসিরা। ঘরে ঘরে ভাইরাল ফ্লো বা ইনফ্লোয়েঞ্জায় ভুগছেন লাখো মানুষ।
ডাক্তাররা বলছেন, বন্যার প্রকোপ গেছে, আটকে থাকা পানি ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করছে। আসবাবপত্রও পানির মধ্যে ছিল, এগুলো থেকেও রোগ ছড়িয়েছে প্রথমে ডায়রিয়া হয়েছে, এখন অতিরিক্ত গরম পড়ায় জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে।
বিশ^ম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন বর্মণ বললেন, মাথ্যা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা, জ্বর, সর্দি, কাশিতে শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। তিনদিনেও জ্বর না কমায় এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেছি। তিনি জানালেন, পরিবারের ছয় সদস্যের সকলেরই জ¦র, কে-কাকে দেখবে।
স্বপন কুমার বর্মণ বললেন, ‘বন্যার পরে নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের কষ্ট বেড়েছে। না আছে ঘরে খাওন। অনেকেই হাত পাতছে, এরমধ্যে অসুখ-বিসুখে কষ্ট বাড়াইছে।’ সরকারকে এখন বন্যা দুর্গত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দেওয়া জরুরি দাবি করলেন তিনি।
বিশ^ম্ভরপুরের দক্ষিণ বাদাঘাটের ললিয়ারচরের মিজানুর রহমানের নিজের এবং চাচাতো ভাইয়ের পরিবারসহ বাড়ির ১৭ জনের সকলেরই ঈদের দুই দিন আগে জ্বর ছিল। ২ জনের কমেছে, ১৫ জনের এখনো জ্বর আছে। মিজানুর রহমান বললেন, সকলেরই মাথা ব্যাথা, পেটে ব্যাথা, ভমির ভাব আছে।
স্বপন বর্মণ ও মিজানুর রহমান বললেন, যার সঙ্গে কথা বলা যায়, সকলেই পরিবারের সদস্যদের জ¦রের কথা জানান। ঘরে ঘরে জ্বর , ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভুগছেন মানুষ।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহমুদুর রহমান রকি বললেন, ৩০ জন রোগী অ্যাটেন্ড করলে ২০ জনেরই দেখা যাচ্ছে ভাইরাল ফ্লো বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। ভয়াবহ বন্যার পর জমে থাকা পানি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের ছত্রাকের প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করেছে। আসবাবপত্রও পানির মধ্যে ছিল, এগুলো থেকেও ভাইরাস ছড়িয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। তবে এসব জ্বর তিন দিনের মধ্যেই প্যারাসিটামল বা এন্টি হিস্টাসিন ওষুধ খেলেই কমে যাচ্ছে। এই চিকিৎসকের পরামর্শ আক্রান্ত যারা হচ্ছেন, বিশুদ্ধ পানি বেশি খেতে হবে, শরীর ঘামলে ওর স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। মাস্ক পরে থাকলে ভালো হয়।
এই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বললেন, হঠাৎ করে আবহাওয়া গরম হওয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব হয়েছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তাদের ছাড়া সকলেরই এই জ্বর হতে পারে। এ ধরণের জ্বরে বিশুদ্ধ পানি বেশি খেতে হবে। প্যারাসিটামল খেয়ে না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। গত দুই তিন দিন হয় ৭০ শতাংশ রোগীই আসছে, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ তাজুল ইসলাম দুই দিন হয় জ¦রে ভোগছেন। তিনি জানালেন, জ্বরের পরিসংখ্যান জেলা ভিত্তিক নেই তাদের কাছে।
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রাজিব চক্রবর্তীও জানালেন, তিনিও জ¦রে ভোগছেন। হাসপাতালের আউটডোরে গত তিন-চার দিন হয় যারাই আসছেন, প্রায় সকলেরই জ্বর, সর্দি ও কাশি। বন্যার পর পর ছিল ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা মোকাবেলা করছেন এই উপজেলার মানুষ।
সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বললেন, ভাইরাল ফ্লো এর সঙ্গে বন্যার সম্পৃক্ততা কম। বন্যার পানি কমতে শুরু হলে ডায়রিয়া বেড়েছিল। কয়দিনে সেটি কমেছে। এখন ঘরে ঘরে ভাইরাল ফ্লো। তিনি জানান, মঙ্গলবার এবং বুধবার ডায়রিয়া রোগীও বেশি ভর্তি হয়েছেন। তিনি দাবি করলেন, ভাইরাল ফ্লো হলে করণীয় জানাতে জেলাজুড়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিধ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বললেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জে আবহাওয়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকবে। শুক্রবার থেকে গরম কমবে। শনিবার থেকে বৃষ্টি আছে।
