গো-খাদ্যের তীব্র সংকট/ অধিক মূল্যে খড় কিনছেন কৃষকেরা

গো-খাদ্যের তীব্র সংকট/ অধিক মূল্যে খড় কিনছেন কৃষকেরা

জয়ন্ত কুমার সরকার, দিরাই
বন্যা পরবর্তী সময়ে বন্যা কবলিত প্রতিটি গ্রামেই গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিক মূল্য দিয়েও মিলছে না খড়। এতে বিপাকে পরে কৃষকেরা কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে হালের বলদ, দুধের গাভি, ছাগল। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় প্রায় প্রতিটি গ্রামই প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে অসংখ্য খড়ের গাদাতে পানি উঠে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ খড়। বর্ষায় খড় শুকানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খড়গুলো পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুয়ায়ী, সম্প্রতি বন্যায় হুমকির মুখে ছিল ৬০ হাজারের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়ার জীবন। বন্যা পরবর্তী সময়ে হাওর এলাকায় নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জসহ উজান এলাকা থেকে খড় বোঝাই করে নৌকা আসছে। নিয়মিত মূল্য থেকে বেশি মূল্য হাকাচ্ছে পাইকাররা। অনেকটা বাধ্য হয়েই অন্তত ৮০০ টাকা মন খড় কিনছেন কৃষকেরা। তবুও হারের বলদ কম দামে বিক্রি করতে রাজি না কৃষক পরিবারগুলো। উপজেলার কৃষক একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল। এই ফসল থেকেই সারাবছরের পুজি সংগ্রহ করেন কৃষকেরা। কৃষক পরিবারগুলোর বাড়তি আয় নির্ভর করে ঘরের গরু বিক্রির উপর।
উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের কৃষক সঞ্জু সরকার। তিনি বলেন, বন্যার সময় ঘরের ধান, বিছানা আসবাবপত্র সরাইতে নিতেই একদিন গেছে। খেড়ের লাছির (গাদা) দিকে নজর দেই নাই। নজর দিলেই কিতা অইতো ? অত খেড় কই থইলামনে ? তিনি বলেন, পশ্চিমা এলাকা থাইক্কা ট্রলার বুঝাই কইরা খেড় লইয়া আইয়ে। হেরা ৮০০ টেকার (মণ প্রতি) কমে মানে না। দশ মণ কিনছি। বাড়িত খেড় না থাকলে খেড় কিইন্না কয়দিন গরু পালমু ?
উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের কৃষক পরিমল তালুকদার বলেন, যে খেড় আছে, কোন রকম এই মাসটা যাইবো। সামনের মাস থাইক্কা খেড় কিনা লাগবো। কোন উপায় দেখতাছি না। খেড় কিইন্না পুষতো না। ৮ টার মধ্যে দুইটা গরু বেইচ্যা দিমু।
করিমপুর ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের কৃষক রতিকান্ত বর্মন বলেন, সামনের রবিবার পশ্চিম এলাকায় (নেত্রকোনা) যাইমু। সরাসরি কিনে আনলে কিছুটা কম দামে পাওয়া য়ায়। ৫ টা গরু লইয়া ভীষণ বিপদে পড়ছি।
দিরাই উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত নি¤œাঞ্চল রফিনগর ভাটিপাড়া ইউনিয়নের কৃষক পরিবারগুলো তাদের গৃহপালিত গরু, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে খুবই চিন্তিত। অনেকেই বলছেন, বেশি দামে হলেও খড় কিনতে চান তারা। তবুও অতি মায়ার লালন পালন করা হালের বলদ, দুধের গাভি বিক্রি করতে চান না তারা।
এমনই একজন মনিকুল মিয়া। বসত করেন রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে। মনিকুল বলেন, পরম যতেœ গরুগুলো বড় করছি। কোন বছর গিরস্থি খারাপ অইলে গরুগুলো বেইচ্চা কোন রকম সংসার চালাই। পাইকার আইছে ঠিকই। আমি বেচছিনা। আওর থাইক্কা জারমুনি (কচুরিপানা) আনি প্রতিদিন সকালে। গ্রামের কেউ কেউ অনেক গরু বেইচ্চা দিছে। আমি কষ্ট কইরা অইলেও কয়েকটা মাস রাখমু।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবরা হ্যামলিন বলেন, বন্যা পরবর্তী কঠিন একটা সময় অতিক্রম করছে কৃষকেরা। হাওর এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট রয়েছে। আরো তিন মাস না গেলে ঘাসের দেখা পাওয়া যাবে না। হাওরে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ঘাস উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। তবে ঘাস উৎপাদনের চাইতে বাইরের খড় ক্রয় করা সহজলভ্য। তবুও পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে ঘাস উৎপাদন করার বিকল্প নেই।

Explore More Districts