গাজীপুর- বাগেরহাটের সংসদীয় আসন আগের মতোই থাকছে – Daily Gazipur Online

গাজীপুর- বাগেরহাটের সংসদীয় আসন আগের মতোই থাকছে – Daily Gazipur Online

স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের সংসদীয় আসন পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা এবং বাগেরহাটের সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি গেজেট ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১০ নভেম্বর ইসির গেজেট বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করেন এবং কমিশনকে জেলাগুলোর নির্বাচনী এলাকা আগের মতো করার নির্দেশ দেন।
বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার এবং বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের বেঞ্চ ইসির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন। আগের ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। এদিকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন ও গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গাজীপুর-৬ আসন থেকে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমান এর আগে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক লিভ টু আপিল ও আবেদনগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে।
গতকাল মঙ্গলবার ও আজ শুনানি হয়। বিরতির পর আজ দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে ইতিপূর্বে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন কমিশনের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী।
সরকার জাবেদ আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, আর সালাহ উদ্দিন সরকারের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানি করেন।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গড়ে তোলে, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ১০ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল। একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলা নিয়ে গঠিত।
হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ৯৮ (বাগেরহাট-৪) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) ও আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠন–সম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হলো।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts