স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মনোনয়ন নিয়ে চলমান তৃণমূল অসন্তোষের মধ্যেই নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে পরিস্থিতি। সোমবার দুই প্রভাবশালী বিএনপি নেতার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ঘটনায় গাজীপুর–১ ও গাজীপুর–২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
সোমবার গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গাজীপুর-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সরকার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। একই দিন গাজীপুর-১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী।
বর্তমানে গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কালিয়াকৈর পৌরসভার স্থগিত মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুজিবুর রহমান। অপরদিকে গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনি।
তবে উভয় আসনেই মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, গণবিক্ষোভ মিছিলসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বিশেষ করে গাজীপুর–২ আসনে আপিল বিভাগের রায়ে গাজীপুর–৬ আসন বিলুপ্ত হয়ে পুনর্গঠিত হওয়ায় ভোটার ও ভৌগোলিক বাস্তবতা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে। স্থানীয় নেতারা দাবি করছেন, নতুন বাস্তবতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার এলাকা টঙ্গী, গাছা ও পূবাইল অঞ্চলের সাংগঠনিক মতামত উপেক্ষা করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা নির্বাচনী ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
গাজীপুর-১ আসনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূল পর্যায়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চলমান অসন্তোষের মধ্যে দুই প্রভাবশালী নেতার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে বিএনপির ভেতরে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার চাপ আরও বেড়েছে।
মশাল মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ, ফরম সংগ্রহে নতুন সমীকরণঃ
এদিকে গাজীপুরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মনোনয়ন নিয়ে চলমান তৃণমূল অসন্তোষ নতুন মাত্রা পেয়েছে। গাজীপুর–২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে সোমবার সন্ধ্যার পর টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশাল মশাল মিছিল বের করেন এবং একপর্যায়ে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করেন।
মশাল মিছিলটি মহাসড়কের টঙ্গী কলেজ গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে একপর্যায়ে চেরাগ আলী বাসস্ট্যান্ডে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা “ন্যায্য মনোনয়ন চাই”, “তৃণমূলের মতামত মানতে হবে”সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এতে ওই এলাকায় কিছু সময় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, “আমি দলের একজন কর্মী। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে গাজীপুর-২ আসনের বাস্তবতা যেভাবে বদলেছে, তাতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত। দল যদি আমাকে দায়িত্ব দেয়, আমি ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।”
অপরদিকে ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে মনোনয়নের বিষয়ে মত প্রকাশ করাটা অস্বাভাবিক নয়। তৃণমূলের অনুভূতি ও দীর্ঘদিনের ত্যাগের মূল্যায়ন করেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে- এটাই আমরা আশা করি।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, টানা কর্মসূচি ও দুই প্রভাবশালী নেতার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ফলে গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চাপ আরও বেড়েছে এবং এতে নির্বাচনী সমীকরণ নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য হতে পারে দলটি।



