দোহা, ১০ নভেম্বর – ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের নানামুখী প্রচেষ্টাও মেলেনি যুদ্ধবিরতির দেখা। এ অবস্থায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা স্থগিত করেছে কাতার।
একইসঙ্গে কখন তারা এই ভূমিকায় কাজ করবে সেটিও জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। রোববার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার তার কাজ স্থগিত করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশটি বলেছে, হামাস এবং ইসরায়েল আলোচনার জন্য যখন ‘তাদের আন্তরিক ইচ্ছা দেখাবে’ তখন তারা তাদের কাজ পুনরায় শুরু করবেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির সর্বসাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর দোহায় হামাসের উপস্থিতি আর গ্রহণযোগ্য নয় বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের কথিত বক্তব্যের পর এই খবর সামনে এলো।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যেমধ্যস্থতা আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে কাতার। একই সঙ্গে দোহাতে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় আর তার উদ্দেশ্য পূরণ করছে না।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুক্তিতে পৌঁছানোর শেষ প্রচেষ্টার সময় কাতার ১০ দিন আগে সংঘাতরত পক্ষগুলোকে জানিয়ে দিয়েছিল যে- যদি এই রাউন্ডে কোনও ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানো না যায় তবে তারা হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেবে।
আরও বলা হয়েছে, কাতার সেই প্রচেষ্টাগুলো আবারও শুরু করবে… যখন সংঘাতরত দলগুলো এই নৃশংস যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাদের আন্তরিক সদিচ্ছা দেখাবে।
এদিকে বিবিসি বলছে, বারাক ওবামা প্রশাসনের অনুরোধে ২০১২ সাল থেকে কাতারের রাজধানীতে হামাসের একটি ঘাঁটি রয়েছে। শনিবার বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সরল বিশ্বাসে চুক্তিতে পৌঁছাতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে দোহায় থাকা হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্মত হয়েছে কাতার।
কিন্তু কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাসের কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে এই ধরনের প্রতিবেদনগুলো ‘ভুল’। হামাসের কর্মকর্তারাও দোহায় তাদের কার্যালয় বন্ধের এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
মূলত কাতার আয়তনে বেশ ছোট দেশ হলেও প্রভাবশালী এই উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। এছাড়া এই দেশটিতে বড় আমেরিকান বিমান ঘাঁটিও রয়েছে। অতীতে ইরান, তালেবান এবং রাশিয়াসহ অনেক সূক্ষ্ম ও জটিল রাজনৈতিক আলোচনা পরিচালনা করেছে কাতার।
গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে বছরব্যাপী যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের পাশাপাশি কাতারও এখন পর্যন্ত প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। যদিও সংঘাত বন্ধে এসব দেশের ভূমিকা এখনও সফল হয়নি।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১০ নভেম্বর ২০২৪