গবেষণা তথ্য: ভোলার মেঘনা নদীতে ৭৭ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে

গবেষণা তথ্য: ভোলার মেঘনা নদীতে ৭৭ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে

৩ October ২০২৫ Friday ২:৫৩:০৪ PM

Print this E-mail this


ভোলা প্রতিনিধি:

গবেষণা তথ্য: ভোলার মেঘনা নদীতে ৭৭ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে

ভোলার মনপুরা ও তজুমদ্দিনের মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেলে সর্বাধিক ইলিশ ডিম ছাড়ে। গেল বছর এ হার ছিল ৭৭ ভাগ। এ বছরও এর কম হবে না বলে মনে করছেন ইলিশ গবেষকরা। রোববার থেকে ২২ দিন ভোলাসহ উপকূলের মিঠা পানিতে ইলিশের ভরা প্রজনন ও মা ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হচ্ছে। সাগর থেকে মা ইলিশ মেঘনা মোহনার মিঠা পানিতে আসতে শুরু করেছে। কী পরিমাণ আসছে, তা হিসাব করতে দুদিন আগ থেকে বাংলাদেশ মৎস্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা টিম নজরদারি শুরু করেছে। ইলিশের উৎপাদনের ৭০ ভাগ নির্ভর করে এ ২২ দিনের ওপর। বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক আবু কায়সার দিদার। একই তথ্য জানান জাটকা রক্ষা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ। 

গবেষণার তথ্যে গেল বছরে সর্বাধিক ইলিশ ডিম ছাড়ে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর ও মৌলভীর চর চ্যানেলে। এর পরিমাণ প্রায় ৭৭ ভাগ। সারা দেশের হিসাবে ইলিশের সফল প্রজনন ও ডিম ছাড়ার হার ছিল ৫২ দশমিক ৫ ভাগ। ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮০২ কেজি ডিম নিষিক্ত হয়েছে (রেণু সৃষ্টি)। এর ৫০ ভাগ ডিম থেকে রেণু হ্যাঁচ করে এমন হিসাবে ইলিশ উৎপাদন হিসাব করা হয়। হ্যাঁচ করার পর রেণুর ১০ ভাগ জীবিত ধরে ইলিশের জাটকা উৎপাদন হয়েছে ৪৪ দশমিক ২৪ কোটি। গত বছর ইলিশ প্রজনন মৌসুম ধরা হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন। বাংলা সনের আশ্বিন মাসের প্রথম পূর্ণিমার হিসাবে এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন নির্ধারণ করেন গবেষকরা। ইলিশ উৎপাদনের হিসাব বের করতে মৌসুমের আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন এ দুইভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া ডিম ছাড়ার ২২ দিন বিভিন্ন পয়েন্টে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে রয়েছে সাতটি গবেষক টিম। এ বছরও ওই টিম কাজ শুরু করেছে।

গবেষকদের মতে, দুই ধরনের ইলিশ মাছ মিঠা পানিতে অবস্থান করবে। এর মধ্যে পুরুষ বা রাজা ইলিশ থেকে স্ট্রেপিং-এর সময় দুধের মতো বা তরল ক্রিমজাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসে। অপরদিকে মা ইলিশ থেকে ডিম ও হালকা রক্তাভ পদার্থ বের হয়ে আসে। সাধারণত পুরুষ ইলিশের চেয়ে স্ত্রী বা মা ইলিশের আকার বড় হয়। গবেষকদের মতে, একটি মা ইলিশের ডিম থেকে ১৮ লাখ জাটকা ইলিশ উৎপাদন হয়ে থাকে। 

ইলিশ মাছের সর্বাধিক ডিম ছাড়ার অঞ্চল হচ্ছে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম সৈয়দ আউলিয়া পয়েন্টের ৮০ কিলোমিটার আয়তন (ইলিশা থেকে মনপুরার সীমানা), চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে রয়েছে মায়ানী ও মিরসরাই পয়েন্টের ১২৫ কিলোমিটার। পটুয়াখালী জেলার লতাচাপালী ও কলাপাড়া পয়েন্ট। অপরদিকে প্রজননের সফলতার হিসাবে ভোলা জেলার পরিমাণ ৭০ ভাগ। পটুয়াখালীর হার ৬৩, লক্ষ্মীপুর জেলার হার ২৭ দশমিক ৫ ভাগ ও কক্সবাজারের হার ৫৬ ভাগ। ২০২৩ সালের ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ দশমিক ৭১ লাখ টন। ইলিশের প্রজনন মৌসুম নিশ্চিত করা গেলে ও পরবর্তী জাটকা সংরক্ষণ করতে পারলেই ইলিশ উৎপাদন ১০ ভাগ বৃদ্ধির আশা করছেন গবেষকরা। 

ইলিশের জন্য বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে ভোলার মেঘনা নদী ও সাগর মোহনায় ডুবোচর বৃদ্ধিতে পরিযায়ী মাছের যাতায়াতে বাধাগ্রস্ত হওয়া। একই অবস্থা অপর দুটি ইলিশ জোনের ক্ষেত্রেও দেখা দেয়। এর পাশাপাশি রয়েছে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বেড়জাল, চরঘেরা জাল, পেটানো জাল, হেহুন্দি জাল, যা বিভিন্ন পয়েন্টে বসিয়ে জাটকা ও ইলিশ শিকার করা হচ্ছে।

জাটকা রক্ষা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে হবে। ইলিশের ভরা প্রজননের ২২ দিন যাতে কোনো জেলে জাল নিয়ে নদীতে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় মাছ ধরা, জাল ফেলা, মাছ সংরক্ষণ, বিক্রি ও পরিবহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কায়সার দিদার জানান, ইলিশ ল্যান্ডিং স্টেশনগুলোকে নজরদারি করা হচ্ছে। রোববার থেকে নদীতে গবেষণা জাহাজ অবতরণ করবে। এবার ভোলার বেশির ভাগ অঞ্চলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ওই গবেষণা কর্মকর্তা। ২২ দিন যাতে কেউ ইলিশ শিকার করতে না পারে এজন্য ভোলার জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। একই বিষয় জানান কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts