খুলনাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রের বাইরে বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্য

খুলনাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রের  বাইরে বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্য

দেয়া হয় ভুয়া কাগজপত্র, প্রকৃত
কাগজধারীরা হচ্ছেন নাজেহাল

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা মহানগরীর বয়রাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে বের হওয়া মাত্রই শুরু হয় টানাটানি। ‘কি ভাই, কি হয়েছে ? আবেদন জমা নেয়নি ? আসেন এদিকে আসেন’। এভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাস্তার বিপরীত দিকের একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পাশের গলিতে। সেখানে গজিয়ে ওঠা একাধিক ফরম পূরণ কেন্দ্রে নিয়ে করা হয় দেন-দরবার। এমন একজনকে সম্প্রতি দেনদরবার করতে দেখা যায় মেইন রাস্তার ওপর বসেই। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে একজন কলেজ শিক্ষককে জনৈক ব্যক্তি বললেন, ‘আমরা আপনাকে করোনার ভ্যাকসিন সনদ তৈরি করে দেবো, আসেন এদিকে আসেন’।
এভাবে বহিরাগত কিছু তথাকথিত দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ভিসা আবেদন জমা দিতে আসা নারী-পুরুষ। কেউ কেউ ভিসা ফিস জমা দিয়ে ভেতরে যেতে চাইলে বাইরে বসেই তার আবেদনপত্রটি টেনে নিয়ে চেক করার নামে করা হয় হয়রানি। গোপনে নিয়ে বলা হয়, আপনার আবেদনে ভুল আছে, সংশোধন করতে টাকা লাগবে। আবার কেউ কেউ ভুয়া সনদপত্র তৈরি করে দিয়েও হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। কখনও কখনও ব্যাংক স্টেটমেন্টও তৈরি করে দেয়া হয়। এতে অনেক সময় সঠিক হিসাবধারীদেরও নাজেহাল হতে হয়। সন্দেহের মধ্যে পড়তে হয় সকলকেই।
বিগত পক্ষকালেরও বেশি সময় খুলনাস্থ ভারতীয় ভিসা অফিসের আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বললেন, এমন অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু তিনি শুনেছেন সেহেতু নজরদারি বাড়িয়ে দেয়া হবে। যদিও দুপুরের পর পুলিশের গাড়ি গিয়ে সেখানে ঘুরতে দেখা যায়। অনেক সময় গোপন আলাপও করতে দেখা যায় ওইসব কথিত দালালের সাথে। যা নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহেরও সৃষ্টি হয়। যেটি অনেকটা ওপেন সিক্রেট হলেও যেন কোন প্রতিকার নেই। আর বহিরাগত এসব দালালদের কারণে ভিসা অফিসের স্বচ্ছতার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যা এখনই প্রতিহত না করা গেলে ভারত গমনেচ্ছুদের হয়রানির মাত্রা বাড়তেই থাকবে বলেও অনেকে মনে করছেন।
খুলনাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রে কথা হয় দাকোপ থেকে কেএম আজগর হোসেন সাব্বির নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি সকালে আসার আগে একজন দালালকে দিয়ে বাইরে সিরিয়াল দেন। দু’ঘন্টা পর নিজে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে এক ঘন্টা পর পান টোকেন।
এরপর অফিসে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় যখন তার সাথে কথা হচ্ছিল তখনও তার সামনে একশ’ সিরিয়াল। কখন ডাক পড়বে সেই অপেক্ষায় থাকা সাব্বিরকে মাঝে-মধ্যে অফিসের বাইরে আসতে দেখা যাচ্ছিল। কথা হলে তিনি জানান, ভেতরে প্রচন্ড গরম। এসিতে কাজ করছে না। তাই তিনি একটু হাফ ছাড়ার জন্য বাইরে আসছেন আবার ভেতরে যাচ্ছেন।
এদিকে, তথাকথিত দালালদের মাধ্যমে অনেকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আবেদন করার ফলে অফিসের আবেদন গ্রহণকারীরাও আগের চেয়ে অনেকটা সচেতন। তারা এজন্য কাগজপত্র অধিক সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। আর এতে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রকৃত কাগজধারীদের।
ডুমুরিয়ার চুকনগর থেকে ভিসা আবেদন জমা দিতে আসা এক নারী তার স্বামীর ২০১১ সালে শুরু করা একটি ব্যাংক হিসাব থেকে স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে আসলেও তার আবেদন জমা নেয়া হয়নি। বলা হয় বিগত ছয়মাসের লেনদেন লাগবে। অথচ ওই হিসাবে লেনদেন ছিল পাঁচ মাসের এবং টাকা জমা ছিল এক লাখেরও বেশি।
খালিশপুরের বিআইডিসি রোড থেকে আসা মো: হাবিব নামের এক ব্যক্তিকে সম্প্রতি ফিরিয়ে দেয়া হয় আবেদন ভুল বলে। কিন্তু কি ভুল সেটি উল্লেখ না করে বলা হয় ডলারের পরিবর্তে ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ যেতে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ গেলেও আবেদন জমা নেয়া হয়নি। এরপর তিনি আর যাননি।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা খুলনা থাকলেও পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা যশোর থাকায় সম্প্রতি সুস্মিতা ঘোষ নামের এক ছাত্রীর আবেদনও জমা নেয়া হয়নি। যদিও তার আবেদনপত্রে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ ছিল।
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তি আবেদন জমা দিতে আসেন কয়রার মদিনাবাদ এলাকা থেকে। কিন্তু তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট ছিড়ে রাখা হয়।
তপু বসু নামের এক আবেদনকারী আসেন বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে। তারও ব্যাংক স্টেটমেন্ট ছিড়ে রেখে আবেদন ফেরত দেয়া হয়।
এভাবে যাদের আবেদন ফেরত দেয়া হয় তাদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেলো এক শ্রেণির দালালের কারণে তাদেরকে এভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে। বহিরাগত এসব দালালদের নিয়ন্ত্রণে তারা পুলিশি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো: মমতাজুল হক বলেন, কেডিএ এভিনিউতে থাকা অবস্থায় সেখানে দালালদের দৌরাত্মের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ ছিল। কিন্তু নতুন জায়গায় যাওয়ার পর তিনি এমন অভিযোগ এখনও পাননি। তবে অভিযোগ আসলে অবশ্যই পুলিশী তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে। অবশ্য, ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বর্তমানে একটি নিরাপত্তাহীন স্থানে করা হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এমনকি এ ব্যাপারে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্রও লিখেছেন।

Explore More Districts