খুলনার সাত কোম্পানীর চিংড়িতে জীবাণু শনাক্ত

খুলনার সাত কোম্পানীর চিংড়িতে জীবাণু শনাক্ত

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনাঞ্চল থেকে রপ্তানী করা সাত কন্টেইনার চিংড়িতে ক্ষতিকর জীবানু পেয়েছে আমদানীকারক দেশ। এরমধ্যে তিন কন্টেইনার চিংড়ি ফেরত পাঠিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা। এসব চিংড়িতে ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, লোহার স্ক্রু ও সিরিঞ্জের নিডল পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। পরবর্তিতে চিংড়ি রপ্তানীর ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে এসব কোম্পানীগুলোকে। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আসছে পরিদর্শনে।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চল থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকায় পাঠানো ৭ কন্টেইনার চিংড়িতে জীবাণুু পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এরমধ্যে তিনটি কোম্পানীর প্রায় ২০ হাজার বক্স চিংড়ি ফেরত এসেছে। এগুলো মংলা বন্দরে খালাসের পর কোম্পানীগুলো মাছ ফেরত নিয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে এসব জীবাণু শানাক্ত হয়েছে।
রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাগুরার বিবেকানন্দ শিকদারের মালিকানাধীন জাপান ফাস্ট ট্রেড লিমিটেডের চিংড়ি রপ্তানী হয় আমেরিকায়। সেখানকার মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর সিমি কার্বাজাইড এন্টিবায়োটিক পেয়েছে চিংড়িতে। খুলনার রূপসার ডা. সৈয়দ আবু আছফারের মালিকানাধীন অর্গানিক শ্রিম্প এক্সপোর্ট লিমিটেডের মাছে ভিভরিওপ্যারা ভাইরাস পেয়েছে। একই এলাকার মো: শরিফুল আলমের মালিকানাধীন রোজেমকো সী ফুড লিমিটেড ও গৌতম দাসের মালিকানাধীন সাতক্ষীরা দীপা সী ফুড লিমিটেডের রপ্তানী করা চিংড়িতে মেলাকাইট গ্রীন এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে। খুলনার রূপসার এসএম মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন এটলাস সী ফুড লিমিটেডের চিংড়িতে স্কু পেয়েছে। একই এলাকার কামরুল হাসানের মালিকানাধীন সালাম সী ফুড লিমিটেডের চিংড়িতে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছে। সাতক্ষীরার মোঃ জালাল উদ্দিনের মালিকানাধীন ক্রীমসন রোজেলা সী ফুড লিমিটেডের মাছে সিরিঞ্জের ভাঙা নিডল পাওয়া গেছে।
সাতটি কোম্পানীর মধ্যে সালাম সী ফুড, রোজেমকো সী ফুড ও দীপা সী ফুডের প্রায় ৬০ হাজার বক্স হিমায়িত চিংড়ি মংলা বন্দরে ফেরত পাঠিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলার কারণে মানবদেহে এক ধরনের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যা অনেক সময় খাদ্য অথবা পানিকে দূষিত করে তোলে। এর ফলে খাদ্যসৃষ্ট সংক্রমণ হয়, যা সালমোনেলসিস নামে পরিচিত। এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এছাড়া এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে মানুষ লিভার ও কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে ক্যান্সার সৃষ্টিতে ঝুঁকি তৈরি করে। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো তাদের দেশে সবসময় নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করে। ফলে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এসব বিষয়গুলো ধরা পড়ায় তারা সতর্ক করেছে বাংলাদেশের মৎস্য ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে।
মান নিয়ন্ত্রন দপ্তরের সূত্র আরো জানায়, আমদানীকারক দেশ হিমায়িত খাদ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রপ্তানীকারকদের এই মর্মে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তাদের খাদ্যে অপদ্রব্য থাকলে বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ এবং জীবানুর উপস্থিতি থাকায় ২০০৯ সালে ইউরোপ বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানীতে কড়াকড়ি আরোপ করে। এরপর আবারও ওই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তারা সতর্ক করেছে। একই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিশারিজ এন্ড ভেটেনারীজ অর্গানাইজেশন (ইভিএফভিও) আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করবে। এসময় সংস্থার প্রতিনিধি দলটি খুলনা-সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের খামার, ডিপো ও হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে।
এদিকে ক্ষতিকর জীবাণুর বিষয় নিয়ে অভিযুক্ত কোম্পানীগুলোর চিংড়ি রপ্তানী আপাতত বন্ধ থাকবে। চিংড়িতে অপদ্রব্য ধরার পর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-যেসব খামার থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানকার পানি ও মাটি পরীক্ষা করা। ডিপো ও কারখানার পরিবেশ পরীক্ষা করা। এসব পরীক্ষায় উৎরে গেলে তবেই অভিযুক্ত কোম্পানীগুলো পুনরায় চিংড়ি রপ্তানী করতে পারবে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, ব্যকটেরিয়া শনাক্ত হওয়ার পর আমদানীকারক দেশগুলোর অনীহা দেখা দিয়েছে। দাম কম ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রপ্তানী বেশ কমেছে। শুধু আমাদের দেশ নয় বিভিন্ন দেশের মাছ ফেরত যায়। সাত কন্টেইনারের মধ্যে চার কন্টেইনার পন্য ইউরোপের বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে। ওই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ স্থানীয় মার্কেট থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে এসব জীবানুর উপস্থিতি পেয়েছে। ফলে এ জীবানু যে বাংলাদেশ থেকেই গেছে তা নিরুপণ করা কঠিন। বাকি তিন কন্টেইনার সেখানকার বন্দর থেকেই ফেরত এসেছে। তিনি আরও জানান, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের খামার, ডিপো ও হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। আমরাও কোম্পানীগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করছি।

Explore More Districts