খুলনায় চালের উচ্চমূল্যে বেসামাল সাধারণ মানুষ

খুলনায় চালের উচ্চমূল্যে বেসামাল সাধারণ মানুষ

# কেজিতে ৫-৭ টাকা বেশি

রঞ্জু আহমদ: আমন মৌসুমের চাল বাজারে আসলেও খুলনায় চাল বিক্রি হচ্ছে বেশি দরে। বাজারে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি মূল্যে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। সরকারি কোষাগারে মজুদ ও মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে খোলা বাজারে ধান যাচ্ছে না। ফলে ভোক্তার চাহিদায় বাজারের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিক এবং কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর সিন্ডিকেটে বাড়ছে চালের দাম। চালের দাম বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য তদারকি নেই প্রশাসনের।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনায় এবার আমন চাষ করা হয় ৯৪ হাজার ৭৯৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন। জেলায় চাহিদা রয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনায় বছরে যে পরিমান ধান উৎপাদন হয় তা এ জেলার মানুষের খাদ্য চাহিদার বেশি। তবে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে জেলা ভিত্তিক উৎপাদনের ভিত্তি কাজে আসে না।
এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে, আমন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে অনেক আগেই। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সব ধরনের চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা দুষছেন মিলারদের আবার মিলাররা দোষ দিচ্ছেন কর্পোরেট কোম্পানীগুলোকে। তবে চালের দামের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে কারো কাছেই তথ্য নেই। গতকাল রোববার খুলনার বাজারে চাল বিক্রি হয়েছে গড়ে ৫ থেকে ৭টাকা বেশি দরে। একসপ্তাহ আগেও এসব চালের দাম ছিলো কম। এরমধ্যে ৪২ টাকা মোটা স্বর্ণা সাড়ে ৪৬ টাকা, ৪৭ টাকার রতœা ৫২ টাকা, ৫৩ টাকার মিনিকেট মানভেদে ৬০ টাকা, ৬৫ টাকার বাসমতি ৭২ টাকা, ৩৮ টাকার ইরি আতপ ৪৩ টাকা, ৬২ টাকার নাজিরশাইল ৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুলনার সব থেকে বড় চালের মোকাম বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী কুন্ডু ট্রেডার্সের মালিক শংকর কুন্ডু বলেন, সারা দেশেই চালের দাম বাড়তি। খুলনায় বড় কোন মিল মালিক নেই। কুষ্টিয়া, যশোর ও দিনাজপুর অঞ্চল থেকে চাল আসে এখানে। মিল মালিকরা দাম বাড়ালে তবেই দাম বাড়ে। আমরা কমিশনে ব্যবসা করি। বিক্রি বেশি হলে লাভ বেশি। দাম বাড়ার কারণে চালের বিক্রিও কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিউ দিনাজপুর ভান্ডারের মালিক শংকর সরকার বলেন, বছরের এই সময়ে সাধারণত দাম বাড়ে না। তবে গড়ে ৫/৭ টাকা হারে দাম বেড়েছে সব ধরনের চালের। বড় বড় মিল মালিক এবং কর্পোরেট কোম্পানীগুলো কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুদ করছে। তারা চাল সরবরাহ না বাড়ালে দাম কমবে না।
খুলনা ধান-চাল বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. মনির আহমেদ জানান, ধানের উৎপাদন কম। চালের আমদানি বন্ধ। যার প্রভাবে খুলনাসহ সারা দেশের চালের দাম বাড়তি।
অন্যদিকে মিল মালিকরা বলছেন, সরকারের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ায় ধানের দাম এখন কিছুটা বাড়তির দিকে। ধানের বিভিন্ন মোকাম, ফড়িয়া এবং মিলাররা বাড়তি দামে ধান কিনছে। এরই ধারাবাহিকতায় দাম বেড়েছে চালেরও।
লবণচরা এলাকার রাইচ মিল মালিক সমিতির সদস্য শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, সারা দেশের অধিকাংশ চাল সরবরাহ হয় উত্তরবঙ্গ থেকে। সরকার ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করায় ধানের দাম মণপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যার প্রভাবে পাইকারি পর্যায়ে চালের বাজার অস্থির হয়েছে।
এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, আমন মৌসুমের ধান মজুদ করা শুরু করেছে সরকার। সরকারের এবার লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ৩৪৭ মেট্রিকটন। বাকি চাল আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংগ্রহ করা হবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, খুলনায় ন্যায্যমূল্যে ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস)পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমেও চাল বিক্রি শুরু করেছে। করোনার পর থেকে নিয়মিত ওএমএস কার্যক্রম চালু আছে। আজ থেকে ৩০ টাকা দরে চাল বিক্রি করবে টিসিবি।
তবে চালের এমন বাড়তি দামে প্রশাসনের তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার খুলনার মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করি। তবে সেখানে মজুদের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বাজারে পাইকারী চালের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তদারকি করা হচ্ছে।

 

Explore More Districts