খালের পাড় ভেঙে বালু উত্তোলন – দৈনিক আজাদী

খালের পাড় ভেঙে বালু উত্তোলন – দৈনিক আজাদী

লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের জঙ্গল পদুয়ার দুর্গম এলাকা ধইন্যা বিলের সাফুর খালের পাড় ভেঙে স্যালো মেশিন বসিয়ে পাঁচটি স্পট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বালু পরিবহনের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। হুমকিতে রয়েছে বহু বসতঘর। বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই স্পটে অভিযান পরিচালনা করে ২০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্থানীয়রা জানান, সাফুর খালটি পার্বত্য জেলার বান্দরবান থেকে উৎপত্তি হয়ে পদুয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খালের দু’পাশে রয়েছে খাস ও হাঙ্গর বিটের আওতাধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা। এছাড়া খতিয়ানভুক্ত জায়গায় রয়েছে বসতঘর। ওই খালের পাঁচটি স্পটে একাধিক স্যালো মেশিন বসিয়ে পাড় ভেঙে দিনরাত সমানতালে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিটি স্পট থেকে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান স্থানীয়রা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ সাফুর খালের পাঁচটি স্পট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিটি স্পটে রয়েছে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট। তারা এলাকার প্রভাবশালী। অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, রয়েছে একাধিক মামলাও। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নাজেহাল কিংবা মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বালু উত্তোলনের স্পটগুলো হলসাফুর খালের ধইন্যা বিলের বড় ডেপা এলাকা, ধইন্যা বিল এলাকার দক্ষিণ পাশ, ধইন্যা বিলের কাঠালিয়ার চর এলাকা, উলুবনিয়ার দুই স্থান। সাফুর খালের আড়াই হাজার ফুট দূরত্বের মধ্যে বালু উত্তোলনের সবগুলো স্পট। নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে উলুবনিয়া এলাকায় প্রায় ৩০টি পরিবারের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন প্রতিটি স্পটে প্রায় ৩৪টি করে স্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হয় ১৮শ টাকায়। এর মধ্যে দখলীয় জায়গার মালিককে দিতে হয় ৩৫শ টাকা, প্রতিটি ভাউচার বাবদ ৩শ টাকা। বান্দরবান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা ভাউচার বই কিনে আনেন। যাতে বালু পরিবহনের সময় কোনো বাধায় পড়তে না হয়। মূলত, ওই ভাউচার দিয়ে ওইসব স্থান থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহন করা হয়। কেউ হস্তক্ষেপ করলে ভাউচার দেখিয়ে নিলামের বালু পরিবহন করছে বলে জানায়। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও পান দৈনিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারা।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গল পদুয়া সড়ক সাফুর খাল থেকে উত্তোলিত বালুর স্পটগুলো দুর্গম এলাকা। বালু পরিবহনের ফলে সড়কটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। উত্তোলিত বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নতুনভাবেও স্যালো মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছিল বালু। খালের পাড় ভেঙে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল পুকুর সমান গর্ত। এসময় মোহাম্মদ হুবায়ের নামে বালু উত্তোলনে অভিযুক্তদের একজনকে ফোন করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন।

লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ধইন্যা বিলের সাফুর খালের দুটি স্পটে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলিত তিনটি স্তূপ থেকে ২০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য স্পটেও অভিযান পরিচালনা করা হবে জানান তিনি।

Explore More Districts