মো: আক্তার হোসেন। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এক সময় আক্তার হোসেন ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পদও বাগিয়ে নিয়েছেন। আর সরকার দলীয় সে ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গঞ্জপাড়া এলাকায় প্রায় একশ শতকের পুকুর ভরাট করেছেন। যদিওবা আক্তার হোসেনের দাবী, তিনি ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে এই পুকুর ভরাট করেছেন,এখানে কোন স্বার্থ নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে,মাত্র এক মাস আগেও গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসার(এম এ হক)পাশে তিন রাস্তার মোড়ে একটি বিশাল পুকুর ছিল। এ পুকুরে মাছ চাষ হতো,স্থানীয়রা গোসল করতেন, গরমের দিনে শিশুরা দাপাদাপি করতো। কিন্তু এখন পুকুরের কোন চিহৃ নেই। এখন যেন বিশাল এক ফুটবল মাঠ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রকাশ্য দিনের আলোতে বালু ও মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করেন। খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়ায় এমন ঘটলেও প্রশাসন ছিলেন ঘুমে। বর্তমানে গঞ্জপাড়ায় প্রতি গন্ডা জমি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা করে। সে হিসেবে ভরাট করা একশ শতক পুকুরে বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে এ নিয়ে স্থানীয় ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহজ পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা জানান, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন পুকুরটি মাটি ফেলে ভরাট করেন। শেষ মুহুর্তে প্রশাসনের বাঁধা আসায় কিছু পুকুরের সামন্য অংশ ভরাট না করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এই বিষয়ে আরও
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো: ইব্রাহিম বলেন, এখানে তাদের ১০ জনের জায়গা রয়েছে। প্রত্যেকের ১০ শতক করে। তবে আব্দুল কাইয়ুম নামে জনৈক ভূমি খোকে বলেন, এখানে সব জায়গা তার একার। তিনি নিজেই ৬৮ শতক জায়গার মালিক। এছাড়া মাদ্রাসার জন্য ১০ শতক ও মসজিদের ১০ শতক জায়গা রাখা হয়েছে।
মো: ইব্রাহিমের জায়গা থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, জায়গাটি কেনার সুবিধার্থে এলাকার কিছু লোককে নাম মাত্র রাখা হয়েছে। আব্দুল কাইয়মের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মো: ইব্রাহিম পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমরা কি তাহলে আব্দুল কাইয়ুমের ক্যাডার বাহিনী নাকি? শুধু বিএনপি নেতা ইব্রাহিম নয় এখানে কয়েক কোটি টাকার জায়গা ভাগভাটায়ারা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মুফিজসহ অনেকে প্রভাবশালী মহলের মধ্যে। তবে নেপথৈ ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। যার বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে।
গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসার(এম এ হক) সহকারী শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন,তিনি দীর্ঘদিন ট্রেনিং-এ ছিলেন। ট্রেনিং-এ যাওয়ার আগে পুকুর ছিল। এসে দেখি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ পুকুরটি এলাকার একমাত্র পানির উৎস। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গোসলসহ এ পুকুরের পানি ব্যবহার করতেন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) মো: এরফার উদ্দিন বলেন, গঞ্জপাড়ায় কোন পুকুর ছিল কিনা জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করেন,তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পক্ষান্তরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগে অর্থ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন বলেন, শেষ মুহুত্বে প্রশাসনের বাঁধার কারণে পুকুরের প্রায় ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় একশ শতক পুকুর ভরাট ও ভাগাভাগিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যৌথ প্রজোজনা ছিল। তার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মূফিজুর রহমান, সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো: ইব্রাহিমসহ অনেকে রয়েছেন। এলাকাবাসী পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।