খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়, বিভিন্ন ফসলি জমি ও পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির হিড়িক পড়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই একটি অসাধু চক্র প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ও ইটভাটায়। এসব মাটি ট্রলি ও ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়িতে নিয়ে যাবার সময় সড়কে পড়ছে। একটু বৃষ্টিতেই এসব সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। আবার এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এতে স্থানীয় সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। আর প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (১৬ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রশিক নগর গ্রামের গুলছড়ি এলাকার এস এন্ড বি ইটভাটা সংলগ্ন বামচরন কার্বারী পাড়ায় ১০ তেকে ১৫ ফিট গভীর করে ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে এস এন্ড বি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফসলি জমির মালিক নব রঞ্জন ত্রিপুরার ছেলে সীতা ত্রিপুরা জানান, তার পিতা এ জমির মাটি ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে এস এন্ড বি ইটভাটায় বিক্রি করেছেন৷
জানতে চাইলে এস এন্ড বি ইটভাটার ম্যানেজার মো. মাসুদ রানা ফসলি জমির মাটি কাটার কথা স্বীকার করে জানান, তাদের ইটভাটার জন্য এ মাটিগুলো কাটছেন। এরূপ অন্যান্য ইটভাটায়ও ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক মো. সেলিমের সাথে কথা বলতে। তবে এস এন্ড বি ইটভাটার মালিক মো. সেলিমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে আরও
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধুমাত্র এসএন্ডবি ইটভাটাই নয় উপজেলার এডিবি ইটভাটা,ফোরবিএম ইটভাটা, কর্ণফুলী ইটভাটা সহ ৪ ইটভাটায় এভাবেই অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি সংগ্রহ করে কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ভাটা মালিকরা অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এসব মাটি ট্রলি ও ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়িতে নিয়ে যাবার সময় সড়কে পড়ছে। একটু বৃষ্টিতেই এসব সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। সম্প্রতি দীঘিনালা-লংগদু সড়কের ফোরবিএম ইটভাটা সংলগ্ন সড়কে দূর্ঘটনায় আহত হন প্রতিবেদক সহ স্থানীয় তিন সাংবাদিক।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাসান জানান, দীঘিনালায় নির্বিচারে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছেনা।
দীঘিনালা পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, অবৈধভাবে পাহাড় ও ফসলি জমি কাটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে অবাধে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে এটাই আমাদের কাম্য।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, প্রশাসন অবৈধভাবে পাহাড় ও ফসলি জমি কাটার বিষয়ে খুবই কঠোর। আপনি আমাকে ঠিকানা দিন। কেউ যদি পরিবেশ ধ্বংস করে পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে থাকে, সেক্ষেত্রে আমি সরেজমিনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।