বিশেষ প্রতিনিধি
নদীতে পানি আসে নি, এজন্য বড় বাল্কহেড বা ধানের নৌকা আসতে পারছে না গ্রামে গ্রামে, প্রত্যন্ত এলাকায় এজন্য ধানের ক্রেতা কম। একারণে অপেক্ষাকৃত কম দামেই ধান বিক্রয় করছেন হাওরের কৃষকরা। এদিকে, রবিবার থেকে জেলায় সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করে এবার প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন ধানের উৎপাদন হয়েছে। বাজারে এখন ধানের দাম প্রকারভেদে ৭৫০ থেকে ১০৫০ টাকা। সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি মণ ১২০০ টাকা। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে রবিবার সুনামগঞ্জ জেলায় ধান কেনা উদ্বোধন করেছেন। জেলায় এবার ধান কেনা হবে ১৭ হাজার ৪৮৩ টন। সরকারি খাদ্য গোদামে একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। জেলার ১২ উপজেলায় কৃষক আছেন তিন লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন (কৃষি অফিসের কৃষক তালিকা অনুযায়ী)। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কৃষক তিন টন করে ধান দিলে সুনামগঞ্জ জেলায় মাত্র পাঁচ হাজার ৮২৭ জন কৃষক সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রয় করতে পারবেন।
এই অবস্থায় ফড়িয়া ও মিল মালিকদের কাছেই দৌঁড়াচ্ছেন কৃষকরা। ফড়িয়া ও মিল মালিকরা পরিবহনের অজুহাতে মণে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কম দিচ্ছে ধানের দাম। জরুরি প্রয়োজনে কম দামেই ধান বিক্রয় করছেন কৃষকরা।
রুববার সকালে সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় ধানের আড়ৎ মধ্যনগরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীতে পানি না থাকায় ওখানে এখনো ধানের কেনা বেচা জমে নি। ওখানকার ৩৪ জন আড়তদারের কেউই গেল তিন চার দিন চার-পাঁচশ মণের বেশি ধান কিনতে পারেন নি।
ধানের আড়তদার গোপেশ সরকার বললেন, নদীতে পানি না হওয়ায় ধানের আমদানী কম। কৃষকরা শুকিয়ে ধান গোলায় তুলে নিয়েছেন। বড় নৌকা না চলায় ফড়িয়া বা ছোট ব্যবসায়ীরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান আনতে পারছে না। এখন যারা জরুরি প্রয়োজনে ধান বিক্রয় করছে, তারা মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে ধান বিক্রয় করছে। কৃষকরাও বেশি ধান বিক্রয় করছেন না। দুই দিন ঘুরে ফড়িয়ারা ১০০ মণ ধানও কিনতে পারছে না।
মধ্যনগর ধান আড়তদার কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বললেন, নৌ-চলাচল শুরু হলে মধ্যনগরের ৩৪ আড়তদারের প্রত্যেকেই হাজার-বারশ মণ ধান কিনতে পারবে। এখন কেউই চার-পাঁচশ মণের বেশি ধান কিনতে পারছে না।
শাল্লার বড় কৃষক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী বললেন, দাড়াইন নদীর ছব্বিশা পর্যন্ত ধানের ব্যাপারীর নৌকা ওঠছে। বাহাড়া ও হবিবপুর নৌকা ওঠছে না। এই কারণে ওকানকার ধান কিনে নৌকায় আনতে মণে ৪০-৫০ টাকা খরচ হয়। এই টাকা কম পাচ্ছে কৃষকরা।
শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বড় কৃষক ছত্তার মিয়া বললেন, শাল্লায় আটশ থেকে আটশ ৫০ টাকা মণে বিক্রয় হচ্ছে ধান। তিনি জানালেন, সরকারিভাবে ধান কেনা যেহেতু শুরু হয়েছে, দুয়েক দিনের মধ্যেই ধানের দাম মণে ১০০ টাকা বেড়ে যাবে। নৌকা চললে ক্রেতাও বাড়বে।
তাহিরপুরের বড়দল নতুন হাটির কৃষক মিলন মিয়া বললেন, নদীতে পানি কম থাকায় ব্যাপারিরা এখন গ্রামে আসতে পারছে না। এই সময়ে ধান ক্রয় করতে সাভার, ভৈরব, আশুগঞ্জের ব্যাপরীগণ বড় নৌকা নিয়ে আসে, এবার এখনো আসে নি। এ কারণে ধানের ক্রেতা কম।
সুনামগঞ্জের মিল মালিক ও রাজনীতিবিদ আবুল কালাম বললেন, নৌকা না চললেও ছোট ছোট পিকআপ দিয়ে এনে ধান বিক্রয় করতে পারছেন জেলার আশি ভাগ কৃষক। মোটা ধান ৯৫০ ও চিকন ধান ১০৫০ টাকায় ক্রয় করছি আমরা। সরকার ১২শ টাকা মণে ধান কেনা শুরু করায় ধানের দাম কিছুটা বাড়বে।
রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিধ মিজানুর রহমান বললেন, আগামী দুই তিনদিন সুনামগঞ্জে বড় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। পানি বাড়ারও সম্ভাবনা কম। আবহাওয়া শুস্ক থাকবে। তিনদিন পর আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে।
