কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকায় আলু কিনে বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি

কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকায় আলু কিনে বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি

জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে নতুন আলুর দাম কমতে শুরু করলেও উল্টো পথে ছুটছে পুরনো আলু। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষকের কাছ থেকে এ আলু কেনা হয় মাত্র ১৫ টাকা দরে। দফায় দফায় পুরনো আলুর এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়ই। তারা বলছেন, এক সময়ে কম দামি পণ্য হিসেবে পরিচিত আলুর এমন মূল্যবৃদ্ধি মোটেও স্বাভাবিক নয়। কৃষক থেকে কম দামে কেনা আলু মজুদ করে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে কারসাজিকারীরা।

কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকায় আলু কিনে বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি

সরকারি সংস্থা টিসিবির প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। সংস্থাটির হিসাবে গত এক মাসে আলুর দাম ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭২ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত মাসে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হওয়া আলু এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় বিক্রি হয়েছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গরিবের ভরসা আলু দামি পণ্যে পরিণত হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর কদমতলী এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো আলুর কেজি ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ৭৮ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। সপ্তাহ দেড়েক আগে পুরনো আলু ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং নতুন আলু ১২০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হয়। নতুন আলুর দাম কিছুটা কমে আসায় সবার প্রত্যাশা ছিল পুরনো আলুর দামও কমে আসবে। কিন্তু বাজার হাঁটছে উল্টো পথে। নতুন আলুর দাম কমলেও পুরনো আলুর দাম কমেনি। দুই ধরনের আলুর দামই এখন সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে।

কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মো. মিলন, ইসমাইল হোসেনসহ অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আলুর দাম যেভাবে বেড়েছে তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। কারণ এ আলু কৃষকদের কাছ থেকে কেজি মাত্র ১৫ টাকায় কেনা হয়। হিমাগারের খরচ যোগ হওয়ার পরও কেজি ৮০ টাকা হওয়ার কথা নয়। সরবরাহ কম ঠিক আছে। কিন্তু এ অজুহাতে সরবরাহকারীরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

আলুর দর নিয়ে বেজায় আক্ষেপ এ এলাকার রিকশাচালক সামসুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আলু খাইয়া পার পাওয়া যাইতো। এহন আলুর কেজিই ৮০ টাকা! সস্তা আলুর দাম যদি ৮০ টাকা হয়, তাহলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ কিভাবে টিকে থাকবে।’

কারওয়ান বাজারের পাইকার মো. মুজিবর মিয়াও জানান, বছরের এমন সময় আলুর মজুদ তলানীতে ঠেকলে দাম বাড়ে। গত বছরও বেড়েছিল। কিন্তু এবার যে হারে বেড়েছে, সেটা অতিরিক্ত। হিমাগার থেকেই বেশি দামে কেনা পড়ছে, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।

নাম প্রকাশ না করে আরেক ব্যবসায়ী জানান, হিমাগারে রাখা আলু নয়, কেবল রসিদ কেনাবেচা চলে এবং প্রতিবার রসিদ হাত বদলে দামও বাড়ে। এর ফলে অতিরিক্ত হাত বদল হচ্ছে। দামও অতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে।

গত জুলাইয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে, কৃষক পর্যায়ে এ আলু কেনা হয়েছে ১৫ টাকা কেজি দরে। যেখানে উৎপাদন খরচ হয় সাড়ে ১০ টাকা। সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কৃত্রিমভাবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বৃদ্ধি করছে।

প্রতিবেদনের আরও জানানো হয়, প্রতিবছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের আলু উঠতে শুরু করে। আলুর একটা অংশ কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে আসে। আর কৃষকের কাছে কিছু মজুদ থাকে এবং বাকিটা থাকে হিমাগারে। ৩৬৫টি হিমাগারে এ বছর ২৪ দশমিক ৯২ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এই সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে মজুদকৃত পুরনো যে আলু বিক্রি হচ্ছে তা কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকা দরে কেনা। অথচ সে আলু সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা জেনেছি, হিমাগারগুলোতে কৃষকরা সরাসরি আলু মজুদ করতে পারেন না। এখানে হিমাগার মালিক, ব্যাপারী ও তাদের এজেন্টরা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে মজুদ করেন এবং তারাই বাজারে ছাড়েন। তাদের হাত বদলে দাম অতিরিক্ত বাড়ছে। এ ছাড়া বাজারে চাঁদাবাজিও আরেক সমস্যা। এ সমস্যাগুলো বারবার উঠে এলেও তাতে নজরদারি নেই। এ সুযোগে কারসাজিকারীরা অতি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ হিমাগার মালিকরা। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আলুর দাম হিমাগারে বাড়ে ঠিক। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হিমাগার মালিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মজুদকারী ও ব্যবসায়ীরা হাত বদলে দাম বাড়ান। এবার উৎপাদনও অনেক কম হয়েছে। অপরদিকে আলুর চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই এমনিতেও এবার বাজার চড়া।

Explore More Districts