কুষ্টিয়ার ৩০ মণের ‘কালো পাহাড়’-এর এখনও ওঠেনি দাম

কুষ্টিয়ার ৩০ মণের ‘কালো পাহাড়’-এর এখনও ওঠেনি দাম

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিলকাঠিয়া গ্রামের কৃষক লিটন শেখ (টুটুল) প্রায় এক বছর ধরে নিজের হাতে লালনপালন করছেন একটি বিশালাকায় ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। নাম রেখেছেন—‘কালো পাহাড়’। ওজন প্রায় ৩০ মণ, উচ্চতা ছয় ফুটের কাছাকাছি, আর দৈর্ঘ্য সাড়ে আট ফুট। বিশাল আকৃতির কারণে গরুটিকে দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিনই ভিড় জমায়।
তবে হতাশার বিষয়, কোরবানির ঈদ আর মাত্র দু’দিন দূরে, অথচ এখনও পর্যন্ত কেউ গরুটির দামই বলেনি। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে টুটুল শেখ, তার স্ত্রী মিরানা খাতুন ও ছেলে সুরুজ আলী শেখের।
টুটুল শেখ জানান, পরিবার মিলে ‘কালো পাহাড়’কে সন্তানের মতো করে বড় করেছেন। সকালে মাঠের কাঁচা ঘাস, গম, ছোলা, খড় আর দানাদার খাবার দিয়ে চলে গরুটির খাওয়ানো। দিনে প্রায় এক হাজার টাকার মতো খরচ হয় খাবারেই। গরমে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা হয়, দিনে চার-পাঁচবার গোসল করানো হয়। গরুটির দেখভালের জন্য পরিবারের কেউ না কেউ সারাক্ষণ গোয়ালঘরে থাকেন।
গত কোরবানির ঈদে গরুটির দাম বলা হয়েছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবছর আশাবাদ ছিল দ্বিগুণ—১২ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠবে দাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ব্যাপারী আসেওনি।
গত ৩ জুন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে গরুটিকে গোয়ালঘর থেকে উঠানে এনে বরই গাছের সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন। ঘনকালো রঙের বিশাল দেহ নিয়ে গরুটি লাফাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে—একটা প্রাণোচ্ছ্বলতা যেন চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন আশপাশের মানুষ।
স্থানীয় প্রবীণ কৃষক আজিজ মোল্লা বলেন, “এতো বড় গরু আগে কখনও এই এলাকায় দেখিনি। প্রতিদিন লোকজন আসে দেখতে। কিন্তু কেউ কিনতে আসছে না, এটাই দুঃখ।”
টুটুল শেখ বলেন, “আমরা সাধারণ কৃষক মানুষ, ব্যবসার হিসাব-নিকাশ বুঝি না। শুধু আশা করেছিলাম, গরুটির ভালো দাম পাবো। কিন্তু এখন যদি কেউ ৭ লাখ টাকাও দেয়, খরচ উঠে গেলে বিক্রি করে দেব।”
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টুটুলের স্ত্রী মিরানা খাতুন। বললেন, “সন্তানের মতো করে বড় করেছি। সারাক্ষণ তাকে ঘিরেই আমাদের সংসার। বিক্রির কথা উঠলেই চোখে পানি আসে।”
ছেলে সুরুজ আলী শেখ বলেন, “এতো বড় গরু ঢাকা নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ—ডাকাতি, দুর্ঘটনার ভয় আছে। তাই বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চাই। এখন লাভের কথা ভাবি না, কেউ যদি শুধু খরচটাই দেয়, তাও ছেড়ে দেব। ভবিষ্যতে আর এমন বড় গরু পালন করব না।”

Explore More Districts