২২ February ২০২৫ Saturday ৬:১৩:৫৬ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
বিশেষ প্রতিনিধি:

ছোট শিশুরা বাহারি রং, মাটি ও কাগজ দিয়ে তৈরি করেছে রঙিন-বর্ণিল সাজের শহীদ মিনার। সারা বছর টিফিনের টাকা থেকে জমানো অর্থ দিয়েই শহীদ মিনার তৈরি করেছে এই শিশুরা। তারা অপেক্ষায় থাকে একুশে ফেব্রুয়ারির। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে তাদের জমানো অর্থ দিয়ে করে আয়োজন। এদিন শিশুরা দলে দলে ভাগ হয়ে তৈরি করে নানা রঙের শহীদ মিনার।
১৪ বছর ধরে বরিশাল নগরের রসুলপুর চরের শিশুরা মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করে আসছে। তাদের আয়োজনে থাকে গান, নাচ, আবৃত্তি, পুরস্কার বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠান। এই শিশুদের সবাই নিম্ন আয়ের পরিবারের। এবার এই শিশুরা ২৫টি শহীদ মিনার তৈরি করেছে।

কীর্তনখোলা নদী তীরে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ হলো এই রসুলপুর। নদীর বাঁকে জেগে ওঠা এই চরে গড়ে উঠেছে সুবিধাবঞ্চিত-দরিদ্র মানুষের বসতি। এর নাম রসুলপুর কলোনি (বস্তি)। এলাকাটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পড়লেও মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। আগে এই চরে শহীদ মিনার ছিল না। শিশুরাও জানত না শহীদ মিনার কী। কিন্তু এখন সেই শিশুরা সবই জানে।
গতকাল শুক্রবার ওই চরে দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিল। কলোনির অলিগলিতে, ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। মাটির বেদিতে কাঠ, ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি মিনার। কাঠের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে লেখা হয়েছে ভাষাশহীদদের নাম। অঙ্কিত হয়েছে মানচিত্র। রঙিন কাগজে আবৃত করা হয়েছে শহীদ মিনার এলাকা।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ মিনার তৈরির পাশাপাশি এসব শিশু ৫/১০ টাকা করে চাঁদা তুলে এবং ঘর থেকে চাল-ডাল এনে আয়োজন করে খাবারের। রান্না করে খিচুড়ি এবং তা রান্না শেষে বিতরণ করা হয় সবার মধ্যে।
জানা যায়, ১৪ বছর আগে এই আয়োজন শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্যসচিব চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তীর হাত ধরে। পুরো আয়োজনকে উৎসাহিত করতে সেরা শহীদ মিনার বাছাইয়ের মাধ্যমে পুরস্কৃতও করা হয়।
এ বিষয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা সমাজের মূলধারায় খাপ খাওয়াতে পারে না। তাদের মনন আর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে না। এসব চিন্তা করেই আমরা বিচ্ছিন্ন রসুলপুর চর এলাকায় এক যুগ ধরে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা লাবণী বেগম বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির এক সপ্তাহ আগে থেকেই শিশুরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে গাঁদা ফুল ও রঙিন কাগজ কিনে সাজায় শহীদ মিনার।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবণী বলেন, ‘মনীষাদি আমাদের এ শহীদ মিনার দেখে পুরস্কার দেয়। শুধু পুরস্কার নয়, শহীদ মিনার সম্পর্কেও ধারণা দেয়।’
শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার বিচারকাজে অংশ নেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষক রণজিৎ মল্লিক, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ইসরাত জাহান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ প্রমুখ।
সুজন আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের মাতৃভাষার প্রতি এই গভীর আবেগ আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা প্রতিবছর একুশের ভোরে যখন এখানে আসি, তখন ভিন্ন এক জগৎ দেখতে পাই।’
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |