শুভ্র মজুমদার, কালিহাতী: টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার চারান চৌরাস্তা এলাকায় এক মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ওপর গরম পানি ঢেলে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোহাম্মদ খোকন (৪২), স্থানীয়ভাবে পাগল খোকন নামে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কালিহাতী সদরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করতেন। গত ৪ জুলাই সকালে তিনি প্রতিদিনের মতো চা খাওয়ার জন্য চারান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আনোয়ার হোসেন আনোর চায়ের দোকানে যান। খোকনের আবদারে ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানদার আনোয়ার হোসেন হঠাৎ চা বানানোর মগ থেকে গরম পানি ছুড়ে মারেন তার শরীরে। শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন খোকন কোনো অভিযোগ না করে অসহায় অবস্থায় নিজ গ্রাম শিমুলটিতে ফিরে যান এবং সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করেন। আনোয়ার হোসেন আনো (৩৫) পাছ চারান গ্রামের মিন্টু খানের ছেলে।
পরদিন সকালে তার ছোট বোন আমিনা বেগম খবর পেয়ে তাকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর ফুফাতো ভাই ইউনুস আলী কালিহাতী থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খোকন জন্ম থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তার স্ত্রী মর্জিনা, ১২ বছরের ছেলে মনির ও ৬ বছরের মেয়ে রহিমাকে ফেলে সে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে জীবনের তাগিদে। ছোট বোন আমিনা বেগম, যিনি নিজেও স্বামীর বাড়িতে থাকেন, একমাত্র মানুষ যিনি খোকনের সন্তানদের মানুষ করছেন এবং যত্ন নিচ্ছেন ভাইয়েরও।
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ঘটনার বিষয়ে বলেন, আমি ইচ্ছা করে গরম পানি দেইনি। ও তো প্রায়ই চা খেতে আসতো, আমি খাওয়াতাম। খোকন বেশি পাগলামী করলে ঠান্ডা পানির ভয় দেখালে সে চলে যেতো কিন্তু ঘটনার দিন ভুলবশত ঠান্ডা পানির জায়গায় গরম পানি ঢেলে দিছি।
ঘটনার পর চারান বাজার বণিক সমিতি, স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা ও সচেতন নাগরিকরা। অভিযুক্ত আনোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে গরম তরল বা ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে কাউকে আঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিষয়টি জাতীয় প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন অনুযায়ী আরও গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আসামী নিজেও স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনকে সোমবার (৭ জুলাই) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ঘটনাটি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত শেষে দোষীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই নির্মম ঘটনা শুধু একজন মানসিক প্রতিবন্ধীর ওপর বর্বরতা নয়, বরং সমাজে মানবিকতার কী ভয়াবহ অবক্ষয় ঘটেছে, তার নগ্ন চিত্র। খোকনের আর্তনাদ যেন সমাজের হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে, বিবেককে নাড়িয়ে দেয় এই প্রত্যাশা সবার।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
–
“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।