কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে আমতলী ইউএনওর গোপন বৈঠক

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে আমতলী ইউএনওর গোপন বৈঠক

২২ October ২০২৫ Wednesday ১০:৪৯:২০ PM

Print this E-mail this


আমতলী ((বরগুনা) প্রতিনিধি:

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে আমতলী ইউএনওর গোপন বৈঠক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খান গোপন বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ভাইরাল হয়েছে।

এ নিয়ে প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা ইউএনওকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, চলতি বছর ১৩ মে মো. রোকনুজ্জামান খান আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উপজেলা বিএনপি নেতাদের। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ করেনি।

গত ৬ জুন তিনি আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিয়ার রহমানের সহচর বশির মৃধাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে চৌরাস্তায় সকাল-সন্ধ্যা হোটেলে ভিআইপি কক্ষে গোপন বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হয়। এ ছবি এখন আমতলীতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া তিনি আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম মৃধার ছেলে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের সঙ্গে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।

তার এমন কর্মকাণ্ডে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের সঙ্গে ইউএনও গোপন বৈঠক করায় তিনি ফ্যাসিস্টদের লালন করছেন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, সকাল-সন্ধ্যা হোটেলের ভিআইপি কক্ষে ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হক, বশির মৃধা, রাসেল ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এসআই নুরুজ্জামানসহ সাতজন খাওয়া-দাওয়া করছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়- ইউএনও ও তার পরিবার এবং আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পরিবারের ছবি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, হোটেলের ভিআইপি কক্ষে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তারা খাবার খেয়ে চলে যান। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খানকে প্রায়ই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যায়।

তারা আরও বলেন, একটি ছবিতে আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে বৈঠক শেষে খাওয়া দাওয়া করতে দেখলাম।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মো. ইলিয়াস হোসাইন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বৈঠক বেমানান ও গর্হিত কাজ।

তারা আরও বলেন, একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে এমন কাজে তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। দ্রুত তাকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান তারা।

আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সৈয়দ আসাদুজ্জামান কাওসার বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আওয়ামী দোসরদের লালন-পালন করছেন। গোপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, খাওয়া দাওয়া ও প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। মনে হয় ইউএনও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। তাকে নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খানের সরকারি মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, এভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও খাওয়া-দাওয়া করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts