আজ আমরা যখন কোনো কিছুকে ‘কাফকায়েস্ক’ বলি, টিপিক্যালি আমরা বোঝাতে চাই মুখাবয়বহীন আমলাতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের দুঃস্বপ্নময় বোঝাপড়াকে, এক অযৌক্তিক ব্যবস্থাকে, আমাদের অস্তিত্বসংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া বিপদগুলোকে, যাদের থেকে পালানোর জো নেই। ধরেন, কত এমন হয় যে, এয়ারপোর্টের ভিসা কাউন্টার আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলল; আপনি যেখানেই ই–মেইল করছেন, সেখান থেকে একই অটোরিপ্লাই আসছে; কলসেন্টারগুলো আপনি বাঁচুন কি মরুন, বিকার নেই, বলেই যাচ্ছে তিন চাপুন-ছয় চাপুন-আগের মেসেজ শুনতে শূন্য চাপুন; চাকরির ইন্টারভিউ নেওয়া লোকগুলো সব একসঙ্গে মিলে আপনার ওপর সেই দোষ চাপাচ্ছেন, যে দোষ আপনি আদৌ করেছেন কি না, তা আপনার মনে নেই। এগুলোই শর্টহ্যান্ডে লেখা কাফকার উত্তরাধিকার, আমাদের ঘাড়ে বসা ‘কাফকায়েস্ক’ বিষয়–আশয়। কাফকাকে এই প্রিজম দিয়ে দেখার কারণ অবশ্যই আছে। তাঁর প্রধান সৃষ্টিগুলো আসলেই উদ্বেগ, দেরিতে পৌঁছানোর বাতিক, চিনতে ভুল করার অভ্যাস, প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা এবং অস্বচ্ছ-অস্পষ্ট কর্তৃত্ববাদের স্বাক্ষরে ভরা।
তবে এই গুরুগম্ভীর কাফকার নিচে সময়ের সঙ্গে কীভাবে যেন চাপা পড়ে গেছে আরও আজব, আরও মাথা ঘোরানো সত্যটুকু: ফ্রানৎস কাফকা যথেষ্ট ফানি ছিলেন। অর্থাৎ তাঁর লেখার অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য হলো চাপা কৌতুক, নির্বিকার হাস্যরস, ভাবলেশহীন হাস্যপরিহাস। যে অন্ধকারের অবয়ব দিয়ে তিনি তাঁর লেখা সাজিয়েছেন, তার ভেতর একটা হাসি সব সময়েই আছে—শুষ্ক ও লুকোচুরি-খেলা হাসি, যেমন কিনা নিস্তব্ধ লাইব্রেরি রুমে হঠাৎ কাশির আওয়াজ।