রাঙামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হাতি ও সামাজিক বনায়নের আগরবাগান রক্ষার্থে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১১টায় কাপ্তাই লকগেইট এলাকার জিরো পয়েন্টে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে কাপ্তাই আগরবাগান মালিক সমিতির সমিতির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল এবং সাধারন সম্পাদক লোকমান আহমেদ নেতৃত্বে শতাধিক উপকারভোগী এবং এলাকাবাসীরা অংশ নেন।
এসময় মানববন্ধনে আগর বাগান দখল করার অভিযোগ নিয়ে কাপ্তাই আগরবাগান মালিক সমিতির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল বলেন, কাপ্তাই রেঞ্জের কামিলাছড়ি বিটে ২০০৭-০৮ সালে ৯০টি অংশীদারিত্ব বনায়ন প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিলো, পরে ২০০৮-০৯ কামিলাছড়ি বিটে ৩০ টি প্লট, ২০০৯-১০ সনে শুকনাছড়ি বিটে ৩২৫ টি প্লট এবং কাপ্তাই সদর বিটে ১০টি প্লট, ব্যঙছড়ি বিটে ১২০ টি প্লট বাগান সহ ৬০০ এর বেশী বাগান আমাদের দেওয়া হয়েছিলো। তখন পরিস্কার করে চারা লাগানোর সময় কোন তরফ থেকে বাঁধা আসেনি। কিংবা বাগান করার জন্য বাঁধা প্রদান করেনি। যখন আমাদের বাগান গুলো করার ১৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে এখন অনেকেই আমাদের এই বাগানের দিকে নজর দিচ্ছে এবং অনেকেই মালিকানা দাবী করছে। বিশেষ করে কিছু জায়গা জীবতলি ও কামিলাছড়ি হেডম্যান এর এবং কিছু জায়গা নৌবাহিনীর দাবী করছে। এখন আমরা নিরূপায় হয়ে বনবিভাগের কাছে জোর দাবী করছি, কেন আমাদেরকে এই বিরোধপুর্ণ জায়গা দিলেন। আমরা এর প্রতিকার চাই।
আগর বাগান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক লোকমান আহামেদ অভিযোগ করে বলেন, বনবিভাগ থেকে এই বাগান পাওয়ার পর আমরা সাত থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করে বাগানকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসছি। ইদানিং দেখা যাচ্ছে নৌবাহিনীর মাধ্যমে আমাদের বাগানগুলি পিলার ঘেরে দখলের চেষ্টা চলছে।
এই বিষয়ে আরও
এদিকে আগরবাগান মালিক সমিতির অভিযোগের বিষয়ে জীবতলী মৌজার হেডম্যান হিটলার দেওয়ান বলেন, বনবিভাগ আমাদের মৌজার জায়গা মধ্যে এই আগর বাগানগুলো করেছে। এটার জন্য আমরা মামলা করেছি এবং রায়ও পেয়েছি। ১৯৪৬ সালের গেজেট অনুযায়ী এগুলো আমাদের মৌজায় পড়েছে এবং বনবিভাগ এটা মানেনি। আমরা যখন আগরবাগান এর জায়গা মাপার জন্য বলি তারা তাতেও রাজি হয়নি। আর বিশেষ করে তারা কাপ্তাই উপজেলা আর আমরা রাঙামাটি সদর উপজেলায় পড়েছি। তাই এখানে সীমানা নির্ধারন জরুরী। এছাড়া আমাদের মৌজার অনেক জায়গা বনবিভাগের মধ্যে আছে। কিন্তু তারা মাপার ক্ষেত্রে কোন সহযোগিতা করেনি। মামলার সব ডকুমেন্ট গুলো আমাদের আছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় বনবিভাগের আগর বাগানের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং ওরা যদি আমাদের মৌজার মধ্যে সেটেল করতে চাই তবে সেটা নিয়মাতান্ত্রিক ভাবে আসতে হবে।
এই বিষয়ে কামিলাছড়ির মৌজার হেডম্যান এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান বলেন, যখন এখানে আগার বাগান শুরু করা হচ্ছে, তখন বনবিভাগকে বলা হয়েছিলো যে এগুলো মৌজার জায়গা। এছাড়া ১৯৪৬ সালের গেজেট অনুযায়ী বুঝা যায়, আগরবাগান যেখানে করা হয়েছে সেগুলো বনবিভাগের জায়গা না, সেগুলো মৌজার জায়গা। আমরা আমাদের মৌজা জায়গাগুলো রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করছি।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ বলেন, এই জায়গাটি কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনের হ্রদপিন্ড। প্রতিবছর এখানে হাতি দুই একটি বাচ্চা প্রসব করে, এটা হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। এইছাড়া এইখানে বানর, হরিন উল্লুক সহ নানা প্রজাতির প্রাণী বিচারণ করে। এই জায়গায় ফিফটি ফিফিটি শর্তে আগর মালিকদের আমরা বাগান সৃজন করতে দিয়েছি, যাতে করে বাগান সৃজন হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
তিনি আরোও বলেন, চলতি মাসের গত ১৩ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রানালয়ের এক চিঠি তে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়কে উল্লেখিত বন ভুমি দিতে পারবে না মর্মে স্পষ্ট লিখে দিয়েছেন।
এদিকে মানববন্ধন শেষে সোমবার ১টায় কাপ্তাই আগর বাগান মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে এর মাধ্যমে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বরাবর প্রেরণ করা হয়। স্বারকলিপিতে বন, পরিবেশ, জীবজন্তু, হাতি এবং আগরবাগান রক্ষা করার দাবী জানানো হয়।