কাপ্তাইয়ের সাচিঅং তংচঙ্গ্যা নিজস্ব সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে চান | PaharBarta.com

কাপ্তাইয়ের সাচিঅং তংচঙ্গ্যা নিজস্ব সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে চান | PaharBarta.com

purabi burmese market

বাঁশের তৈরী পাহাড়ী বাদ্য যন্ত্র ধুদুক এবং হিংকরং। চাকমা ভাষায় হিংকরংকে খেংগরং বলে।
আধুনিক বাদ্য যন্ত্রের দাপটে পাহাড়ে এই যন্ত্র ২ টির বাদক দিন দিন কমে আসছে। বিশেষ করে চাকমাদের বিজু এবং তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসব এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে এই যন্ত্র পরিবেশন করেন কিছু পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্রী। তাদের একজন ৬৫ বছর বয়সী সাচিঅং তংচঙ্গ্যা। যিনি বিগত ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়ে আসছেন।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ৭ নং ওয়ার্ডের ভালুকিয়া তংচঙ্গ্যা পাড়ার ইন্দ্র কুমার তংচঙ্গ্যার ছেলে সাচিঅং তংচঙ্গ্যা। পেশায় একজন কৃষক হলেও শখের বসে এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে ঠিকে রাখার স্বার্থে তিনি এই যন্ত্র দুইটি বাজান বলে জানান।

গত ১২ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায় কাপ্তাই ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারে তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়ে দর্শকের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন।
তাঁর পরিবেশনা শেষে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে।

তিনি জানান, তাঁর বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তিনি রাজস্থলী উপজেলায় একটি বিষুর প্রোগামে প্রথম ধুদুক বাজান। সেদিন তাঁর বাজনায় খুশি হয়ে একজন দর্শক তাঁকে ৫শত টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। সেইদিন আমার ভীষণ খুশি লেগেছে।

এই বিষয়ে আরও

তিনি আরোও জানান, এই পর্যন্ত আমি কাপ্তাইয়ের ভালুকিয়া, ওয়াগ্গা এবং রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন পাড়ায় সামাজিক উৎসবে ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়েছি। আমার বাবাও এই দুটি যন্ত্র বাজাতো, আমি বাবার কাছ থেকে এইগুলোর বাজনা শিখেছি। ফুঁ দিয়ে হিংকরং বাজাতে বেশ পরিশ্রম হয় বলে তিনি জানান, তবে হাতের সাহায্যে নিদিষ্ট তাল মাত্রায় ধুদুক বাজাতে হয় বলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান।

dhaka tribune ad2

সাচিঅং আক্ষেপ করে বলেন, ইদানিং নতুন নতুন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের প্রভাবে আমাদের সামাজিক উৎসব এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের এই বাজনা শুনতে চায় না বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা । তবে জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই যন্ত্রগুলো বাজাবো। যদিও এই যন্ত্র বাজিয়ে আমি জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি না, তাই আমি সংসার চালানোর জন্য কৃষি কাজ করি।

কাপ্তাই ওয়াগ্গার তংচঙ্গ্যা ভাষার গীতিকবি শিক্ষক চাঁদ কুমার তংচঙ্গ্যা বলেন, আমাদের আদি সংস্কৃৃতির একটি অনুষঙ্গ এই বাদ্যযন্ত্র গুলো। তবে কালের বিবর্তনে এই গুলো হারাতে বসেছি আমরা। সাচিঅং তংচঙ্গ্যার মতো কিছু শিল্পীর জন্য এখনো মাঝে মাঝে আমাদের এই যন্ত্র গুলোর পরিবেশনা মঞ্চে শুনতে পায়।

কাপ্তাইয়ের এই প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পী বেতার ও টিভি শিল্পী জ্যাকলিন তংচঙ্গ্যা, সুমনা তংচঙ্গ্যা ও সুর্যসেন তংচঙ্গ্যা অভিমত ব্যক্ত করে জানান, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে টিকে রাখতে হলে, এই যন্ত্র গুলোর চর্চা নতুন তংচঙ্গ্যা শিল্পীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

প্রবীন যন্ত্র শিল্পী সাচিঅং তংচঙ্গ্যা গত ১২ এপ্রিল কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহার মাঠে বিষু উৎসবে ধুদুক ও হিংকরং বাজিয়ে দর্শকের অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন।

Explore More Districts