ঐহিক অমরতায় রণদা প্রসাদ সাহা

ঐহিক অমরতায় রণদা প্রসাদ সাহা

নারায়ণগঞ্জকে তিনি তৈরি করেন তাঁর ব্যবসায়ের কর্মকেন্দ্র হিসেবে। নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী কমপ্লেক্স নামে বিরাট এলাকাব্যাপী ব্যবসায়িক কমপ্লেক্স গড়ে তোলেন।

রণদা প্রসাদ সাহার চরিত্রে ছিল এক আশ্চর্য গুণ। যেসব ব্যবসায় অন্যরা ব্যর্থ হয়ে নামমাত্র মূল্যে বেচে দিত, সেগুলো তিনি কিনে নিতেন এবং দক্ষতা ও ঐকান্তিকতায় তাঁকে সফল করে তুলতেন।

ব্যবসায়ী গোত্রের সন্তান বলেই সম্ভবত তিনি যেকোনো ব্যবসার প্রধান সাংগঠনিক সমস্যাগুলো বুঝতে ও দ্রুত সমাধান করতে পারতেন। ব্যবসার এক পর্যায়ে রণদা প্রসাদ সাহা তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কল্যাণধর্মী কাজের স্বার্থে একটি ট্রাস্টভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন—এর নাম দেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আব বেঙ্গল। ১৯৪৭ সালে থেকে ট্রাস্ট তাঁর সব ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং কল্যাণ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে।

রণদা প্রসাদ সাহার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। জীবনের পাঠশালাতেই তাঁর শিক্ষালাভ। পুঁথি-পুস্তকের পাতা থেকে আহরিত বিদ্যার চেয়ে এই বিদ্যা যে আনেক বেশি জীবন্ত ও বাস্তব, এই সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি জীবনের শুরুতেই। তিনি বলতেন, ‘মানুষের দুটো জাত—নারী ও পুরুষ আর ধর্ম একটাই, মানবধর্ম। আমি মানুষ, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। মানুষ হতে চেষ্টা করো, এটাই হবে তোমার সবচেয়ে বড় পরিচয়।’ এভাবেই তাঁর গড়ে তোলা সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের তিনি দিয়েছিলেন মানবিক সাম্যের পাঠ।

রণদা প্রসাদের চিন্তাচেতনায় গতির প্রচণ্ড আবেগ লক্ষণীয়। গতানুগতিক ভাবধারা পাল্টে দিয়ে সংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য কর্মস্থল হিসেবে তিনি বেছে নিয়ে ছিলেন শহর থেকে বহুদূরে একটি গণ্ডগ্রাম। বিশ শতকের শুরুতে গ্রামটিতে ছিল কিছু বসতবাড়ি আর জলাজঙ্গলের সঙ্গে অশিক্ষা ও প্রচণ্ড কুসংস্কারের বেড়াজাল। ঢাকা থেকে মির্জাপুর ৬৭ কিলোমিটার দূরে হলেও একমুখী স্রোতের লৌহজং নদীটিই ছিল তখনকার সময়ে যাতায়াতের একমাত্র পথ।

Explore More Districts