সোহানুর রহমান সোহান
তাহিরপুর উপজেলার হাওরপাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম শরীফপুর। মধ্যনগর সীমানা ঘেঁষা এই গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়ানো একটি মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শরীফপুর রাধাচরন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কয়েকবছর হয় এই বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এক হাতে সামলাতে হচ্ছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উৎফল কুমারকে।
দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উৎফল কুমার ছাড়া আর কোনো শিক্ষক নেই। দুই-তিনটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে একসাথে পাঠদান করেন তিনি। এতে সদইচ্ছা থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সকল কাজ একা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সকাল থেকে শুরু করে বিকাল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে একের পর এক ক্লাস নিতে নিতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন এই শিক্ষক। কোনো কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারলে ঐ দিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়।
একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী আরেক গ্রাম দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এক বছর এক হাতে একটি বিদ্যালয় সামলিয়েছেন শিক্ষিকা সাথী রাণী। একা বিদ্যালয় চালাতে গিয়ে অমানবিক কষ্টের স্বীকার হতে হয়েছে তাকে। বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে পাঠদান চালিয়েছেন একাই। একটি শ্রেণীতে পাঠদান করানোর সময় অন্য সব শ্রেণীকক্ষগুলো শিক্ষক শূন্য থাকে। তবে কয়েকদিন আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বিদ্যালয়ে আরেক জন শিক্ষিকা আসলেও কাটছে না শিক্ষক স্বল্পতা। কাঙ্খিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয় দুটির ২০৩ শিক্ষার্থী।
অথচ সম্প্রতি সুনামগঞ্জে ৭ শ’ নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও একজন নতুন শিক্ষক পায় নি বিদ্যালয় দুটির ২০৩ ক্ষুদে শিক্ষার্থী। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সাথে বারবার যোগাযোগ করার পরও কোন সমাধান করতে পারেন নি শিক্ষকরা।
রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উৎফল কুমার বলেন, ২০২০ সাল থেকে শিক্ষক হিসেবে আমি একাই স্কুলে আছি। সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে একসাথে করে ক্লাস করাতে হয়। না হলে আমি এক ক্লাসে গেলে, অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকে। যদি কোনো কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকি সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। স্যারেরা শুধু শিক্ষক দিচ্ছি দিচ্ছি বলে আসছেন।
দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাথী রাণি একা বিদ্যালয় চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, দপ্তরী, সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক কেউ নাই আমার স্কুলে। সবকিছু আমার একা চালাতে হয়েছে। একজন প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক অনেক কাজ। সেই কাজ সামলাতে পারি না, ক্লাস নেব কীভাবে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শক্ষার্থী বিজয় তালুকদার বলেন, গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য আমার বাবা জমি দিয়েছেন স্কুলকে। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় বাবার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে না।
অভিভাবক আলপনা রাণী তালুকদার বলেন, প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত একসাথে পড়ানো হয়। একসাথে পড়ালে কি আর পড়া হবে ছাত্রদের। আমরা স্কুলে মাস্টার চাই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বললেন, নতুন নিয়োগের পরেও উপজেলায় এখনো ৫৫ টি শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তাই শিক্ষক স্বল্পতা কাটানো যাচ্ছে না। তবে একজন করে শিক্ষক দিয়ে একটি বিদ্যালয় চলতে পারে না। তাই এটা শুনার সাথে সাথে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ডেপুটেশনে দ্রুত অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
