স্টাফ রিপোর্টার
করোনার সংক্রমণ বাড়ায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে বন্ধ থাকা স্কুলগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও মুখরিত হয়েছে। সারাদেশের মতো এক মাস পর সুনামগঞ্জে আজ থেকে স্কুলগুলোতে সশরীরে পাঠদান শুরু হলো। এতে খুশি শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থী করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, শুধুমাত্র তারাই শ্রেণিকক্ষে সশরীরে ক্লাস করতে পারছেন। বাকিদের ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। সকাল থেকেই সুনামগঞ্জের শহরের প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে ও হাত ধুয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার বিধিনিষেধ না মানা হলেও সবার মুখে মাস্ক দেখা গেছে।
এক মাস পর সশরীরে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে খুশি সবাই। প্রিয় ক্যাম্পাসে এসে অনেক দিনের জমানো কথা একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করছেন শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ¯েœহা সরকার হৃদী বললেন, একজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির সংক্রমণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১ মাস পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। আমরা সবাই সবাইকে দেখতে পারছি। স্যারেরা আসছেন, ক্লাস করছেন। এমন পরিবেশে আমাদের অনেক ভালো লাগছে।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পনা তালুকদার বললেন, আজকে অনেক দিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবসময় এভাবেই খোলা থাকুক। স্যারেরাও আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। অনেক দিন গ্যাপ গিয়েছে, এতে অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। আর পিছাতে চাই না।
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন বললেন, বিদ্যালয় বন্ধ আর ভালো লাগে না। আমরা প্রতিদিন শ্রেণিতে বসে ক্লাস করতে চাই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বিধিনিষেধ মেনে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিপূর্ণতা পায় না। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা থেকে দূরে সরে গেছে। তাই সরকার বিধি নিষেধ দিয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি তাদের।
এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে দিনে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো। প্রথম দিনে সুনামগঞ্জ বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলো ২১ জন। সপ্তম শ্রেণির ৪২ জনের মধ্যে ১০ জন, অষ্টম শ্রেণির ৮১ জন মধ্যে ১২ জন, নবম শ্রেণির ৮০ জনের মধ্যে ১২ জন এবং দশম শ্রেণির ৪৫ জনের মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ১২ বছরের কম বয়সী ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ ছিলো। এতে অনেক শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রমি তালুকদার, বনশ্রী রায় বর্ষী ও মৌসুমি বণিক বললেন, বিদ্যালয়ে এসেছিলাম ক্লাস করতে। এসে দেখলাম আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে। স্যার বলেছেন আমাদের ভ্যাকসিন নেয়া হয়নি। তাই আমাদের ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।
বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবেদীন বললেন, দুই বছর আগে যে বাচ্চা প্রথম শ্রেণিতে পড়ত এখন সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এদের মধ্যে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা এ বি সি ডি না শিখে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে গেছে। এই অবস্থা থেকে শিক্ষার মান যদি বাড়াতে হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। একদিন দুইদিন করে খুলে দিলে হবে না। এই দাবি সারা দেশের শিক্ষক অভিভাবকদের।
তিনি আরও বলেন, আজকে প্রথম দিন হওয়ায় সকল শিক্ষার্থীরা আসেনি। যারা এসেছে তাদের কার কোনদিন ক্লাস আমরা বলে দিয়েছি। আশা করি আগামীকাল থেকে সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) অসীম বর্মণ বললেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আমাদের দুঃখ যে, সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে পারিনি। সরকারি নিদের্শনা মেনে বিভিন্ন ক্লাসগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে করতে হচ্ছে। আমরা চাই প্রতিদিনই বাচ্চারা বিদ্যালয়ে আসুক। কারণ শিক্ষার্থীরা ছাড়া বিদ্যালয় পরিপূর্ণতা লাভ করে না। শিক্ষার্থীরাই আমাদের প্রাণ। তারা আসলে আমরা কর্মস্পৃহা ফিরে পাই।