উপন্যাসের সত্য ও বাস্তব

উপন্যাসের সত্য ও বাস্তব

আবার যাকে বলা হয় হাইপারবোল, তা–ও মিথ্যা নয়। এটি বাস্তবকে দৃঢ়তর করার একটি কৌশলমাত্র বা বাস্তবের বহুস্তরীয় গভীরতাকে উন্মোচনের উপাদানমাত্র। হাইপারবোল এক অতিশয়োক্তি, যা জোর দেওয়া বা প্রভাব বিস্তার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা শুধু লেখাতেই নয়, আমাদের বাস্তব জীবনেও ব্যবহৃত হয়, যেমন ‘হাজারবার বলেছি যে এটা করো’, এখানে ‘হাজারবার’ আক্ষরিক অর্থে সত্য নয়, শুধু জোর দেওয়া অর্থে সত্য। কিন্তু হাইপারবোল রূপক নয়। রূপকের উদ্দেশ্য গভীর অর্থকে প্রতিভাসিত করা। কিন্তু হাইপারবোলের কাজ হলো আবেগকে তীব্র করা বা প্রভাব সৃষ্টি করা। মার্কেসের শত বছরের নিঃসঙ্গতা-য় এমন অতিরঞ্জন চোখে পড়ে। ম্যাজিক রিয়ালিজম নামের জনপ্রিয় ঘরানায় যে জাদু শব্দটি রয়েছে, তা আসলে বাস্তবকে অপ্রত্যাশিত ও অনুপমভাবে উপস্থাপনের একটি কৌশলমাত্র। শত বছরের নিঃসঙ্গতা-র একটি বর্ণনা:

‘যখনই হোর্সে আর্কাদিয়ো ঘরের দরজা বন্ধ করল, বন্দুকের গুলির শব্দ পুরো ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল। রক্তের একটি ধারা চৌকাঠের নিচ দিয়ে গড়িয়ে আসে, বসার ঘর পেরিয়ে রাস্তায় গিয়ে নামে, একদম সোজা রেখা ধরে হাঁটে—মেঝে, সিঁড়ি, ফুটপাত পেরিয়ে মোড় নেয় ডান দিকে, আবার বাঁ দিকে, ব্যুয়েন্দিয়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে, ড্রয়িংরুম অতিক্রম করে রান্নাঘরে এসে পড়ে, যেখানে উরসুলা ছত্রিশটা ডিম ভাঙতে যাচ্ছিল ব্রেড বানানোর জন্য।

“হে ঈশ্বরী মাতা”, চিৎকার করে উঠল উরসুলা।’

এখানে মনে হবে কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। মৃত মানুষের রক্ত ভ্রমণ করছে ঘর থেকে রাস্তায়, তারপর ঘরে। এই অবস্থাটি আপাতভাবে অসম্ভব মনে হলেও পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য। কারণ, এই রক্ত ছেলের মৃত্যুসংবাদ মায়ের কাছে পৌঁছানোর একটি রূপক। বাস্তব এখানে আরও বেশি গভীরতা পায়। তা ছাড়া ব্রেড বানানোর জন্য ছত্রিশটা ডিম!

Explore More Districts