উন্নয়নের জন্য আর প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত নয়

উন্নয়নের জন্য আর প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত নয়

এনামুল হক, ধর্মপাশা
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেছেন, হাওরে আর সড়ক নির্মাণ নয়, নি¤œাঞ্চলেও সড়ক হবে না। শেখ হাসিনা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এটার বাস্তবায়ন আমার মন্ত্রণালয় থেকে হচ্ছে। আমরা ডুবো আর উড়াল সড়ক নির্মাণ করবো, গাছ, মাছ, পশু পাখি যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেদিকেও আমাদের নজর আছে। আমরা ভাটির মানুষ, জলাভূমির মানুষ, আপাতত সমন্বয় করে আমাদের বাঁচতে হবে। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যেভাবে টিকেছিল, তা থেকেই শিখছি আমরা। প্রকৃতির জায়গা প্রকৃতিকে দিয়ে, আমাদেরকে আমাদের জায়গায় থাকতে হবে।
দৈনিক সমকাল’এর আয়োজনে ‘হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা ঠেকাতে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সুনামগঞ্জ শহরের জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সভাপতি’র বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, আপনার অঞ্চল, শহর ও জেলাকে বাসযোগ্য রাখতে নাগরিক সমাজের সবাইকে একাট্টা হতে হবে। উন্নয়ন কেবল মেগা প্রকল্প নয়। উন্নয়ন হচ্ছে জীবন মানের উন্নয়ন। উন্নয়ন হচ্ছে সা্স্কংৃতকি উন্নয়ন, গণতন্ত্রের উন্নয়ন, নীতি নৈতিকথার উন্নয়ন। উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো দরকার। এমন অবকাঠামো গড়ে তুলবো না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যা ভূ-প্রাকৃতি পরিবেশকে ধ্বংস করে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পাখিরা যাতে উড়ে না যায়, মাছের বংশ যাতে ধ্বংস না হয়। ছোটও সুন্দর হতে পারে। পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন দরকার। প্রকৃতিকে ক্ষেপালে, প্রকৃতি তার জবাব দেবে। উন্নয়ন ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান একইসঙ্গে থাকতে হবে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ অনুষ্ঠানে পঠিত মূল প্রবন্ধে অকাল বন্য ঠেকাতে দেওয়া প্রস্তাবনাকে যথার্থ উল্লেখ করে বলেন, সুরমা কুশিয়ারার উৎসস্থল বা অমলসিদ থেকে ভৈরব পর্যন্ত নদীকে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন যে ড্রেজিং হচ্ছে, তা অপরিকল্পিত। মাটি কোথায় ফেলবে, তার কোনো পরিকল্পনা নেই। কোন নদী কতটুকু খনন হবে, তা স্পস্ট করা হয় না। সাধারণ মানুষ হাইড্রোলিক চার্ট বুঝে না। ফলে নদী কতটুকু খনন হওয়ার কথা, কতটুকু হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম বললেন, পানির প্রবাহ ও নদীর গভীরতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর নদী খনন হচ্ছে কী-না তা আমাদের জানতে হবে। দেখা যায় ১৬ কিলোমিটার নদী খননের প্রয়োজন, অথচ ৪-৫ কিলোমিটার খনন করেই বন্ধ করে করে দেওয়া হয় কাজ। খনন কাজ এক সাথে করতে হবে। তিনি পরিবেশ বিধ্বংসি সকল কাজই বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে রাতের আধারে বোমা মেশিন চলে। চার বছর তা বন্ধ ছিল, কিন্তু এখন আবার বোমা মেশিন চালু হয়েছে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বললেন, সীমান্তবর্তী জেলা শহর সুনামগঞ্জের লাখো মানুষকে অকাল বন্যা বা অতি বন্যার কষ্ট থেকে বাঁচাতে শহর সংরক্ষণ প্রকল্প জরুরি। নদীর পানি সাত দশমিক আট মিটার হলেই শহরের ঘরবাড়িতে পানি ওঠে। অথচ. এই সুরমাপাড়েরই শহর সিলেটে নদীর পানি ১০ মিটার উঁচু দিয়ে গেলেও শহরবাসী সমস্যায় পড়েন না।
আলোচনায় এছাড়াও অংশ নেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাজাহান কবির, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামসুল আবেদীন,
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুল হক, জেলা সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায়, কবি মুনমুন চৌধুরী, সমাজকর্মী সাদত মান্নান অভি, রাজনীতিবিদ সেলিম আহমদ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ, কলেজ-বিশ^ বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি শুভঙ্কর তালুকদার মান্না, সমকালের সিলেট অফিস প্রধান মুকিত রহমানী, সুনামগঞ্জ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি’র সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খলিল রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, কাশমির রেজা,
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আাজাদ, নারী উদ্যেক্তা জাহানারা বেগম, সমকাল সুহৃদ সমাবেশের জেলা সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুল হাসান শাহীন প্রমুখ। শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি সৌরভ ভূষণ দেব।
সমকালের এই আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জেলা প্রতিনিধি পঙ্কজ দে।

Explore More Districts