উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশ

উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে পারে। গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইয়ারকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশও বাংলাদেশের এ উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। কারণ, তার সরকার ও দল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের পর তা’ বাস্তবায়ন করে। তিনি আর বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন। আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। এ সময় বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, তার সংস্থা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য ইতোমধ্যে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কার্বন নিঃসরণকারী নই’, তা’ সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ যথেষ্ট খারাপ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। আইয়ার অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক তার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক একটি বহুমাত্রিক বিনিয়োগ কর্মসূচির আওতায় শহরটিকে আরো বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশগত পুনরুদ্ধার ও ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলোর নাব্য নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা এ দেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থারও প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থা অসাধারণ।’ তিনি উন্নয়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং এটিকে সমৃদ্ধশালী বলে বর্ণনা করেন। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা রকমের সহায়তায় বিশ্বব্যাংক সবসময়ই এগিয়ে এসেছে। যদিও পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক শেষ একটি পর্যায়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য রাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বিভিন্ন ধরণের অর্থ সহায়তাসহ নানা ধরণের প্রযুক্তিগত বা অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা যাতে করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কারিগরি ও প্রযুক্তি উৎকর্য সাধনের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা একটি লক্ষ্য ঠিক করে এগুতে পারলে যে কোন উদ্দেশ্যই যে সফল হয় তা’ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর উন্নয়নের চিত্র দেখেই বোঝা যায়। এ জন্যই বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে পারে অন্যান্য দেশ। বিশ্ব বাংকের নির্বাহী পরিচালকের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে অনেক উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার এজেন্ডাকে যেভাবে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা’ দেশের সার্বিক অগ্রগতি দেখলেই বোঝা যায়। আমরা মনে করি একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। শুধু একটি জিনিসকে টার্গেট করলেই চলবে না। এ টার্গেটের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীকে একটি ধারায় সন্নিবেশিত করে এগুতো হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকার তেমনি একটি সমন্বিত ধারার সূত্রপাত করেছে। আমরা এ ধারার নির্বিঘœ যাত্রা প্রত্যাশা করি। তবে এক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে এগুতে হবে। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সহায়তার বিষয়াবলী এ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইস্য্।ু এ ইস্যুগুলিকে গুরুত্ব দিয়েই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে। বাংলাদেশ যে নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়ন মহাড়কে চলছে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। বিশ্বব্যাংকের সফররত আমরা সেই বিশ্বব্যাংকের সফররত নির্বাহী পরিচালক যে মন্তব্য করেছেন সেখানে ফুটে উঠেছে সে কথা। অথচ এই বিশ্বব্যাংক দশ বছর আগে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে এবং দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে আর্থিক ঋণ সহায়তা প্রত্যাহার করে। বাংলাদেম স্বীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। সক্ষমতার এ সূত্রে এখন বিশ্বব্যাপী অনন্য মর্যাদায় উপনীত হয়েছে দেশ। বিশ্বব্যাংকের সফররত নির্বাহী পরিচালককে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই এ কারণে যে তিনি তার ব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মোডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 

Explore More Districts