ইউক্রেন একসময় রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে – DesheBideshe

ইউক্রেন একসময় রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে – DesheBideshe

ইউক্রেন একসময় রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে – DesheBideshe

ওয়াশিংটন, ১২ ফেব্রুয়ারি – মস্কোর পক্ষে আমেরিকান নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন একদিন হয়তো রাশিয়ার হয়ে যাবে।’ বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তার আগেই ট্রাম্পের এ মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক মহলে। ক্রেমলিন ইউক্রেন আক্রমণ করার প্রায় তিন বছর পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁজ বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে, ট্রাম্প যিনি তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারের সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি এখন মস্কো এবং কিয়েভকে আলোচনার টেবিলে আনতে চাপ দিচ্ছেন।

ফক্স নিউজকে সোমবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেন হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সমঝোতা করতে পারে। আবার সেটা নাও হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে, ইউক্রেন একদিন রাশিয়ার হয়ে গেল।’ ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ঘিরেই চলছে জোর চর্চা। ঠিক কী বলতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিনিয়োগের ওপর রিটার্নের অঙ্ক কষছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বিরল খনিজগুলোর জন্য কিয়েভের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন ‘তাদের (ইউক্রেন) বলেছিলাম যে আমি সমতুল্য জিনিস চাই, যেমন ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল খনিজ এবং তারা এতে সম্মত হয়েছে।’ ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্রর সঙ্গে সম্পদ আহরণের জন্য একটি অংশীদারত্ব গঠনের লক্ষ্যে তিনি আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। ট্রাম্প, যিনি বারবার দাবি করেছেন যে, ২০২২ সালে তিনি ওভাল অফিসে থাকলে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ কখনোই ঘটত না, ক্ষমতায় আসার পর এখন যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি এর আগে ইউক্রেনের বিশাল সামরিক সহায়তার সরবরাহ বন্ধ করার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কঠোর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করছেন। কিয়েভ আশঙ্কা করছে, যে কোনো চুক্তিতে কঠোর সামরিক প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত না থাকলে-যেমন ন্যাটো সদস্যপদ বা শান্তিরক্ষা সৈন্য মোতায়েন না করলে ক্রেমলিন নতুন করে আক্রমণের জন্য সজ্জিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।

যুদ্ধ অবসান হতে হলে পুতিনের শর্ত মানতে হবে: এদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ হতে হলে তার আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সব শর্ত পূরণ হতে হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন রিয়াবকভ। সোমবার তিনি ইউক্রেন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর আগে রাশিয়ার সব শর্ত পূরণের ওপরই জোর দেন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গত বছর জুনে ইউক্রেন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে তার শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল, ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন বাদ দেওয়া। আর ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল থেকে পুরোপুরি সেনা সরিয়ে নেওয়া। ওই চারটি অঞ্চল বর্তমানে রাশিয়া তাদের অংশ বলে দাবি করেছে এবং অঞ্চলগুলো বেশিরভাগই রুশ শাসনে পরিচালিত হচ্ছে। রুশ উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াবকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ যত তাড়াতাড়ি এই শর্তগুলো বুঝে নিয়ে তা গ্রহণ করবে, তত তাড়াতাড়ি ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে পৌঁছা যাবে। রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামানোর আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র অগ্রগতি করছে বলেই মনে করেন তিনি। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে পরে পুতিনের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘কথা হয়েছে। কেবল এটুকুই বলি—হয়েছে।’ পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এই কথা হওয়ার বিষয়টি ক্রেমলিন নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। তবে ইউক্রেন নিয়ে কোনোরকম আলোচনা শুরুর আগেই ঝটপট মস্কোর চূড়ান্ত দাবি জানিয়ে দেন রিয়াবকভ। তবে পুতিন যে সব শর্ত দিয়েছেন, তা মানতে আগেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইউক্রেন। দেশটি ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চায় এবং রাশিয়ার কাছে খোয়ানো অঞ্চল আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফেরত পেতে চায়। গত বছর জুনেই কিয়েভ বলেছিল, পুতিনের শর্ত ইউক্রেনের জন্য আত্মসমর্পণ করারই শামিল।

সূত্র: কালবেলা
আইএ/ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 



Explore More Districts