অন্তত শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও নতুন নেতাদের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে আলোচনা উঠেছে। সম্ভাব্য এসব তরুণ প্রার্থীর অনেকে এলাকায় মানুষের নজর কেড়েছেন জানা গেছে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিলে নতুন মুখ হিসেবে এই তরুণদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে জায়গা করে নিতে পারেন। তবে এসব তরুণ বা নতুন মুখ যেসব আসনে প্রার্থী হবেন সেসব আসনে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে দলটির সাবেক এমপিদের মধ্যে। ইতোমধ্যে সারা দেশের নির্বাচনি এলাকায় তরুণদের অনেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনি ইশতেহার ও নির্বাচনি জোট- এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। প্রার্থী মনোনয়নে প্রাধান্য পাবে ত্যাগী, সৎ ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতারা। প্রার্থী বাছাইয়ে এলাকায় জনপ্রিয়তা ও জনমত জরিপের ফলাফলকে এবার গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া থাকবে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়। কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা হলেও নির্বাচনি এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকলে তাকে মনোনয়ন দেবে না বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপিতে অতীতে অনেক নতুন নতুন প্রার্থী এসেছেন; যারা এমপি ও মন্ত্রী হয়েছেন। যাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে দল নিশ্চিত হতে পারবে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকের ত্যাগ-তিতিক্ষা বেশি হলেও যোগ্য না-ও হতে পারেন। এমন প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দল তাকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। তবে নির্বাচনি আসনে কে বেশি জনপ্রিয়, সেটাই দেখা হবে। যাকে দিলে আসন নিরাপদ হবে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
‘রাজনীতিতে সেই ব্যক্তি তরুণ যতক্ষণ তার কর্মক্ষমতা রয়েছে। বয়স কোনো বিষয় নয়। কর্মক্ষম না হলে সেই তরুণের রাজনীতিতে অবদান রাখা কঠিন। পাশাপাশি ত্যাগ স্বীকার করা নেতা তরুণ হলেও তাকে বিজয়ী করে আনতে পারব কি না সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য তাকে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য তৈরি করা হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ কোনো আসন কারও জন্য নির্ধারিত নয়। আমি কী পেলাম, আর পেলাম না এটা বড় বিষয় নয়- টিম জেতানোই বড় বিষয়’ যোগ করেন বিএনপির নীতিনির্ধারক এই নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে একঝাঁক তরুণ নেতা নির্বাচনকে সামনে রেখে নীরবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা হলেন- ঢাকা-৪ আসনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৭ আসনে যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও যুবদল দক্ষিণের সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ, ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা-১৫ আসনে যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, ঢাকা-১৬ আসনে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ঢাকা-১৮ আসনে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া ঢাকা থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এসব তরুণ নেতা সামনের কাতারে থেকে ভূমিকা রেখেছিলেন।
যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান বলেন, ‘বিগত সময়ে দলের দুর্দিনে সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও আছি। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চাই। তাই আমি জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েও দল ও জোটের প্রয়োজনে যখন প্রত্যাহার করতে বলেছিল তখন ছেড়ে দিয়েছিলাম। আগামী দিনেও দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছি।’
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা-১ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, মানিকগঞ্জ-১ আসনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নরসিংদী-৩ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহী, নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নরসিংদী-৫ আসনে বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল ও জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভুঁইয়া রুহেল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকি, টাঙ্গাইল-১ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইল-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম ও ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ আসনে কালিহাতী উপজেলার সাবেক সভাপতি শুকুর মাহমুদ, টাঙ্গাইল-৫ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, টাঙ্গাইল-৬ আসনে যুবদলের সাবেক সদস্য রবিউল আওয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ আসনে জেলা কৃষকদলের সভাপতি দিপু হায়দার খানের নাম জোরালোভাবে আলোচনায় রয়েছে।
সিলেট বিভাগ
সিলেটের ৫টি আসনে নতুন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের মধ্যে সিলেট-২ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, সিলেট-৩ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট-৪ আসনে বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ও জেলা বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক স্টেলিন তারিয়াং, সিলেট-৫ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী ও ফাহিম আল চৌধুরী ট্রাস্ট্রের চেয়ারম্যান ফাহিম আল চৌধুরী এবং সিলেট-৬ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীর নাম স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আছে। তরুণ নেতা হুমায়ূন কবির ও ব্যারিস্টার এমএ সালাম জিয়া পরিবারের সঙ্গে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন গত দেড় দশক ধরে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর পর তারেক রহমানের সঙ্গে হুমায়ূন কবির ও এমএ সালাম কাজ করছেন। ফলে আগামী দিনে তারা সিলেটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হচ্ছেন বলে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর ফাহিম আল চৌধুরীর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা ছিল অপরিসীম এবং তারেক রহমানের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন।
গত ১৫ বছর ধরে তারেক রহমানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘সিলেটের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছি ও সমাধানের চেষ্টা করছি। যেহেতু রাজনীতি করি, তাই নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সবকিছু বিবেচনা করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’ তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে নির্দেশনা দেবেন সেই মোতাবেক কাজ করব।’
সিলেটের জনগণ প্রকৃত রাজনীতিবিদকে মূল্যায়ন করতে চায়। এলাকায় ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই থাকি না কেন এলাকার উন্নয়নে আগামীতেও কাজ করে যাব’ যোগ করেন তরুণ এই নেতা।
এদিকে, সিলেট বিভাগের চার জেলায়ও নতুন একাধিক তরুণ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। হবিগঞ্জ-১ আসনে তালহা চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ আসনে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ আলী মুকিব, মৌলভীবাজার-১ আসনে যুবদলের সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হক সাজু, মৌলভীবাজার-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফায়ার্স কমিটির সদস্য বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, সুনামগঞ্জ-১ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি এমএ সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৪ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল হক নুরুলের নামও রয়েছে আলোচনায়। এরা প্রত্যেকেই বিএনপির ৩১ দফা সংবলিত লিফলেট নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল নোমান ও নাছির উদ্দিন নাছিরের মতো হেভিওয়েট নেতার নাম। দীর্ঘদিন সংসদ ও রাজপথ কাঁপিয়ে সালাউদ্দিন কাদের ও নোমান প্রয়াত হয়েছেন। মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তবে তাদের শূন্যতা পূরণ করতে এবার নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন উত্তর সূরিরা। চট্টগ্রাম-৫ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল, চট্টগ্রাম-৭ আসনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিসকাতুল চৌধুরী পাপ্পু ও চট্টগ্রাম-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন একঝাঁক তরুণ নেতা। ফেনী-১ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কক্সবাজার-৩ আসনে জেলা ছাত্রদলের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হক রাসেল ও ফাহিমুর রহমান ফাহিম, কক্সবাজার-৪ আসনে জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এবং যুক্তরাজ্য আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কো-অডিনেটর আবু নাছের শেখ, নোয়াখালী-৬ আসনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু, নোয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সালেহ মো. সায়েমের নাম এলাকার জনগণের মুখে মুখে ফিরছে।
ব্যারিস্টার সায়েম বলেন, ‘এলাকার রাজনীতিতে নতুন কিছু করে এলাকার মানুষের মন জয় করতে চাই। মিথ্যা আশ্বাসের বদলে কথা ও কাজে মিল আছে এমন রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। দল মনোনয়ন দিলেই কেবল নির্বাচন করব। মনোনয়ন না দিলেও আজীবন দলের নির্দেশনায় কাজ করব।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে দলকে সুসংহত করতে কাজ করে যাচ্ছি। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচনে অংশ নিব।’
খুলনা বিভাগ
খুলনায় এবার আগেভাগে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। তবে এই বিভাগে নতুন প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। খুলনা-১ আসনে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম পাপুল ও খুলনা-৬ আসনে জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু ও সাংবাদিক আনোয়ার আলদীনের নাম জোরালো আলোচনায় রয়েছে। তরুণ নেতা সাংবাদিক আলাদীন গত ১৫ বছর ধরে রাস্তা-ঘাট, মসজিদ ও হাসপাতালসহ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে সুনাম কুড়িয়েছেন। এই বিভাগের বাগেরহাট-৪ আসনে বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বাগেরহাট-৩ আসনে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঝিনাইদহ-২ আসনে সাবেক এমপি মশিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান বাবু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মজিদ বিশ্বাস (ছোট মজিদ), ঝিনাইদহ-৩ আসনে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি ও আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ঝিনাইদহ-৪ আসনে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ, মেহেরপুর-১ আসনে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম, নড়াইল-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রকৌশলী মো. আইয়ুব হোসেন মুকুল, যশোর-১ আসনে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির, যশোর-২ আসনে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বিএনপির নিখোঁজ নেতা নাজমুল হোসাইনের স্ত্রী সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর-৫ আসনে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুছা ও যশোর-৬ আসনে বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর নাম উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য এসব প্রার্থী।
বরিশাল বিভাগ
বরিশালে বিভাগে প্রবীণ নেতাদের ওপরই আস্থা রাখতে পারে বিএনপি। তবে বরিশাল-৬ আসনে চমক দেখাতে পারেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন। মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। এই বিভাগের অন্য জেলা ভোলা-৪ আসন থেকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, বরগুনা-১ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজবুল কবির, পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির কমিটি সদস্য হাসান মামুন, পিরোজপুর-১ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, পিরোজপুর-২ আসনের ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন ও সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন, পিরোজপুর-৩ আসনে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতা এ আর মামুন খান এবং ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল ও নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা এবং ঝালকাঠি-২ আসনে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন।
কুমিল্লা বিভাগ
বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ কুমিল্লায় মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতারা মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। নানা অনুষ্ঠানে তাদের সরব উপস্থিতি যেন নির্বাচনের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। কুমিল্লা-২ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভুঁইয়া ও প্রয়াত নেতা এম কে আনোয়ারের ছেলে কাইজার হোসেন, কুমিল্লা-৪ আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এফএম তারেক মুন্সী, কুমিল্লা-৫ আসনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি জসিম উদ্দিন ও বুড়িংচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম মিজানুর রহমান, কুমিল্লা-৯ আসনে বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার যেকোনো আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেনকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সম্ভাব্য এসব প্রার্থী মনোনয়ন পেতে যে যার মতো করে কেন্দ্রেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এই বিভাগের চাঁদপুর-২ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ডাক্তার সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, চাঁদপুর-৫ আসনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বাদল এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৪ আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা খন্দকার ও তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রহমান সানীর ভাই জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদ ভূইঁয়ার নাম আলোচনায় রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগ
তরুণদের নিয়ে আলোচনা থেমে নেই রাজশাহী বিভাগেও। এ বিভাগে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি গণসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজশাহী-১ আসনে বিশিষ্ট শিল্পপতি অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, রাজশাহী-২ আসনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, রাজশাহী-৩ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রায়হানুল আলম রায়হান, রাজশাহী-৪ আসনে বাগমারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, মো. ইসফা খায়রুল হক শিমুল ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মোস্তফা এবং রাজশাহী-৬ আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের নাম ছড়িয়ে পড়েছে সম্ভাব্য নতুন প্রার্থী হিসেবে। এই বিভাগের বগুড়া-৫ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, জয়পুরহাট-২ আসনে অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাব) নেতা প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. রকিবুল করিম খান পাপ্পুর নাম জনগণের মুখে মুখে রয়েছে। পাপ্পুর মনোনয়নও একরকম নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ বিভাগ
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ-১ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ-২ আসনে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, ময়মনসিংহ-৩ আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, ময়মনসিংহ-৬ আসনে সাবেক এমপি শামসুদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর হোসেন রানা, ময়মনসিংহ-৯ আসনে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. মামুন বিন আব্দুল মান্নান, ময়মনসিংহ-১১ আসনে ভালুকা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ মোর্শেদ আলম নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বিভাগের জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারের মেয়ে ব্যারিস্টার সালিমা বেগম আরুণি, জামালপুর-৩ আসনে বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নেত্রকোনা-৩ আসনে অ্যাব নেতা প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, নেত্রকোনা-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক এবং নেত্রকোনা-১ আসনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আলোচনায় রয়েছেন। তবে বিএনপি নেতাদের অজস্র মামলা পরিচালনা করে দলে সুনাম কুড়ানো কায়সার কামালের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
রংপুর বিভাগ
রংপুর বিভাগে বিএনপির নতুন প্রার্থীদের তৎপরতা অনেক বেশি। মনোয়নয়ন দৌড়ে জোরালো আলোচনায় রয়েছেন রংপুর-১ আসনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরীফ নেওয়াজ জোহা, রংপুর-২ আসনে রংপুর মহানগরের সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম রসুল বকুল, রংপুর-৩ আসনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু, রংপুর-৪ আসনে পীরগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আফসার আলী, রংপুর-৫ আসনে বিএনপি নেতা ডা. জহিরুল ইসলাম ও মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নিক্সন পাইকার। ইতোমধ্যে এসব প্রার্থী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন।
এই বিভাগের ঠাকুরগাঁও-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে রানীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ নূর আলিফ, দিনাজপুর-১ আসনে বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, দিনাজপুর-২ আসনে বিরল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ কালু ও জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ, দিনাজপুর-৫ আসনে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান, দিনাজপুর-৬ আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নীলফামারী-৪ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, কুড়িগ্রাম-১ আসনে ড্যাব নেতা ডা. মো. ইউনুছ আলী, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মমতাজ বেগম লিপি, গাইবান্ধা-১ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. জিয়াউল ইসলাম, গাইবান্ধা-২ আসনে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টিটুল, গাইবান্ধা-৩ আসনে উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিক, গাইবান্ধা-৪ আসনে গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ, গাইবান্ধা-৫ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা নাজেমুল ইসলাম প্রধান নয়ন এবং পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের নাম আলোচনায় রয়েছে। সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে নওশাদ জমিরের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
ফরিদপুর বিভাগ
ফরিদপুর-৪ আসনে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদপুর-৩ আসনে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, মাদারীপুর-১ আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান, মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক, মাদারীপুর-৩ আসনে বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, গোপালগঞ্জ-২ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি সরদার মো. নুরুজ্জামান, গোপালগঞ্জ-৩ আসন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর নাম আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর আরও বলেন, কখনো কখনো কৌশলগত কারণে একটা জেলায় ভালো প্রার্থী দিতে হয়। এর প্রভাব চারিদিকে পড়ে। বিগত সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় চট্টগ্রামের আসনগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি আগামীতে তিন জায়গা থেকে দাঁড়ান তাহলে এই তিন আসনের সঙ্গে আরও ১২টি আসন চলে আসবে। কারণ জনগণ ভোট দেওয়ার আগে পাশের আসনের অবস্থান বিবেচনা করেন।’ খবরের কাগজ’র সৌজন্যে