রোববার বিকেল ৫টার দিকে মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গিয়ে চোখে পড়ল একদল মানুষ প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় করছেন। ভেতরে ঢোকার জন্য তারা নিরাপত্তা প্রহরীকে অনুরোধ করছেন। কিন্তু তিনি গেট খুলতে নারাজ। অনেক অনুরোধের পরও তিনি ভেতরে ঢুকতে দিলেন না। কারণ বিকেল হয়ে গেছে। এ সময় আবু তালেব বিশ্বাস নামে এক যুবক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, অনেক শখ ছিল ৫ কেজি ওজনের আম দেখব। আজ মনে হয় তা আর হলো না। শুধু তিনি নয়, তার মতো আরও অনেকেই এসেছেন ৫ কেজি ওজনের আমি দেখতে।
সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকেই দেখা মিলল দৃষ্টিনন্দন, চোখ জুড়ানো সেই ৫ কেজি ওজনের আমের। ছোট্ট একটি গাছ। তাতে ধরে আছে বড় বড় আম। ওজন গড়ে ৪-৫ কেজি। এই আমের নাম ব্রুনাই কিং। এসেছে সুদূর ব্রুনাই থেকে।
জানতে চাইলে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক ইমদাদ হোসেন বলেন, ‘ব্রনাই কিং আমের চারা মূলত শালিখা উপজেলার আতিয়ার রহমানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার ভাগনে ব্রনাই থেকে ২০১১ সালে এ জাতের আম গাছের একটি ডাল নিয়ে এসেছিলেন। সেখান থেকেই ব্রুনাই কিং জাতের আমের চারা গোটা জেলা ছড়িয়ে পড়েছে।’
আম সাধারণত এক কেজি বা তার চেয়ে একটু বেশি ওজনের হয়ে থাকে। কিন্তু ব্রুনাই কিং জাতের আম ওজনে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। ব্রুনাই কিং আম গাছের উচ্চতা ৮-১০ ফুট পর্যন্ত হয়। আকারে ছোট বলে কম জায়গায় বেশি চারা লাগানো সম্ভব।
ব্রুনাই কিং আম দেখতে অনেকটা পেঁপের মতো লম্বা। কাঁচা অবস্থায় এর রং কালচে সবুজ। সাধারণত শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে আম পাকে। স্বাদ অনেকটা ফজলি আমের মতো।
মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ব্রুনাই কিং আম দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মসলা গবেষণা কেন্দ্রে আসছেন অনেকে। তিন বছর আগে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ব্রুনাই কিং আমের চারা সংগ্রহ করে অফিসের সামনে রোপণ করেছিলাম। এ বছর তিনটি গাছে ২০-২৫টি আম ধরেছে। প্রত্যকটা আম চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের হয়েছে। অন্য আমের থেকে দেরিতে এই আম পেকে থাকে। তবে যদি বেশি খরা বা রোদ্দুর পড়ে তখন এই আমি একটু তাড়াতাড়ি পেকে যায়। এই আমের স্বাদ প্রায় ফজলি আমের মতোই।
তিনি আরও বলেন, ব্রুনাই কিং মূলত সৌন্দর্যবর্ধক আম। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষেরা বাড়ির সামনে বা বাসা বাড়িতে ছাদ বাগান তৈরি করে এই জাতের আমগাছের চারা রোপণ করতে পারেন। আমগাছ আকারে ছোট এবং বেশি লম্বা হয় না। তাই অল্প জায়াগার মধ্যে এই আমগাছের চারা রোপণ করা যায়। এখন এই আম দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন। অনেকেই এই জাতের আমগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন।