মকসুদ ভাই ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ। তিনি একদিকে যেমন অনেক উঁচুমানের গবেষক ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং অতিজনপ্রিয় কলামিস্ট ও লেখক। তিনি অনেক উঁচুমানের গবেষণাগ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। মাওলানা ভাসানীর ওপর তাঁর কাজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে তাঁর লেখা বুদ্ধিজীবীমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, মহাত্মা গান্ধী ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ওপর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। বাংলাসাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
মকসুদ ভাইয়ের প্রতিবাদী সত্তার দৃষ্টান্ত মেলে তাঁর সাংবাদিকজীবনেও। লেখাপড়া শেষে সাংবাদিকতা পেশায় তাঁর যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনালে, যা পরে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বাসস ছেড়ে দেন অন্যায়ের প্রতিবাদে। ২০০৪ সালের ১ মার্চ তিনি প্রথম আলোতে ‘হুমায়ুন আজাদের ওপর আঘাত-ফ্যাসিবাদের নগ্নরূপ’ শিরোনামের একটি কলাম লেখার পর তাঁকে ভবিষ্যতে কলাম লেখা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, যার প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে তিনি ‘সহজিয়া কড়চা’ এবং ‘বাঘা তেঁতুল’ শিরোনামে প্রথম আলোতে নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। মাঝখানে তিনি একবার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
বহুমুখী প্রতিভার সংমিশ্রণে সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের ক্ষুরধার চিন্তা, গবেষণা ও গবেষণাপ্রসূত ভাবনা থেকে অনেক সমস্যার সমাধানের পথ দেখাতে পান। এ সমাধানগুলো যখন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা জনমানুষের অধিকার ও স্বার্থের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়, তখন তাঁরা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল বা গণমানুষের বুদ্ধিজীবীতে পরিণত হন। সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন তেমনি একজন গণমানুষের বুদ্ধিজীবী। তবে তাঁর বুদ্ধিভিত্তিক কার্যক্রম তাঁকে এলিটিস্টে পরিণত করেনি, তাঁকে জনমানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায়নি, বরং তাঁকে তাদের কাতারে নিয়ে এসেছে। তিনি নিজে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন এবং এ কাজ করতে গিয়ে তিনি জনস্বার্থের ধারক ও বাহকে পরিণত হয়েছিলেন। আজীবন তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভা জনকল্যাণে নিবেদিত করেছিলেন এবং তাদেরই একজনে পরিণত হয়েছিলেন, পরিণত হয়েছিলেন তাদের ‘হিরোতে’।