১৫ July ২০২৫ Tuesday ১:২৯:২০ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।।

আমতলী পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও সংস্কারের অভাবে অর্ধশতাধিক সড়ক বেহাল হয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এসব সড়কে পায়ে হেঁটে তো দূরের কথা, রিকশায় চড়েও চলাচল করা যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে যায় হাঁটু পানি। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব সড়ক সংস্কার ও পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পৌরবাসী।
আমতলী পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে এটি। সময়ের পরিক্রমায় ২০০৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাসের এই পৌরসভাটি বর্তমানে নাগরিকদের চরম ভোগান্তির পৌরসভা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে হাঁটু পানি জমে, ফলে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
আমতলী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে প্রায় দেড় শতাধিক সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক সড়ক সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কের পিচ এবং আরসিসি ঢালাই উঠে গিয়ে শত শত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি জমে যায়, যার ফলে জনসাধারণের চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
চার নম্বর ওয়ার্ডের অমল পালের দোকান থেকে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকানের বালির দোকান পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোতাহার হোসেন খাঁ বলেন, “বাবা, রাস্তাটা ভাইঙ্গা এমন অবস্থা হইছে, রিকশায়ও যাওয়া যায় না, মাজা-কোমর সব ধইরা যায়।”
চার নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম নজির মৃধার বাড়ির সামনে থেকে আখরাবাড়ি পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের সিসি ঢালাই উঠে গিয়ে মাঝখানে এক থেকে দেড় ফুট গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু থেকেই এই গর্তে পানি জমে থাকে, ফলে মানুষজন দেয়ালের পাশ দিয়ে লাফিয়ে চলাচল করছেন।
সেই সড়কের এক ব্যবসায়ী, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “পৌরসভার রাস্তা এত ভাঙা এবং পানিতে ভর্তি, আমি আমার জীবনে দেখি নাই।”
এক্স-স্কুল থেকে বটতলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে, আমতলী সরকারি একে হাইস্কুলের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত খাস পুকুর পারসংলগ্ন অংশে প্রায় ২০০ মিটার সড়ক ধসে পাশের লেকে পড়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল খালেক মাওলানা বলেন, “এই সড়কটির অর্ধেকের বেশি লেকের পানিতে পড়ে গেছে। বাকি অংশটুকু পড়লে চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।”
চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমানের বাড়ির পূর্ব পাশে পৌরসভার সীমানা প্রাচীরসংলগ্ন এক কিলোমিটার সড়কও খানাখন্দে ভরা।
এক স্কুল শিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, “প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাই, কিন্তু বর্ষায় চলাচল করতে পারি না কারণ রাস্তা ভাঙা, তার ওপর পানি জমে থাকে।
তিন নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে থেকে খোন্তাকাটা পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেখা বেগম বলেন, “পানি জমে থাকে বলে মানুষ এখন আর স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। হাজীবাড়ি সংলগ্ন সড়কটির অবস্থাও একই। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন না থাকায় বর্ষার শুরু থেকেই হাঁটু পানি জমে থাকে।
হোমিও চিকিৎসক মো. আলি হোসেন বলেন, “সড়কে পানি থাকায় আমরা পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছি। তিন নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা থেকে লোদা সীমান্ত পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। এই সড়ক দিয়ে হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করেন।
বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদারের বাড়ির সামনে সড়কটি তিন বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, “পৌরসভার কাছে বহুবার গেছি এই সড়কটি সংস্কারের জন্য, কোনো ফল হয়নি।”
খোন্তাকাটা হারুন ডাক্তারের বাড়ি থেকে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাড়ি হয়ে পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত সড়কটি গত পাঁচ বছর ধরে বেহাল।
বর্ষায় স্থানীয়রা বালুর বস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। সড়কের পাশে ড্রেন না থাকায় অর্ধশতাধিক পরিবার প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, “শতাধিক পরিবার বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের লঞ্চঘাট এলাকার খাস পুকুর পারের সড়কটি ১০ বছর আগে পুকুরে বিলীন হলেও এখনো সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষায় ১০-১২টি পরিবার পানিবন্দি থাকে। তারা নিজেদের টাকায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করছেন।
স্থানীয় গৃহকর্তা আশরাফুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মোগো এখন পৌরসভা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।
আমতলী সরকারি কলেজের পেছনের এক কিলোমিটার সড়কও বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
আট নম্বর ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম দেওয়ান মজিবর রহমানের বাড়ির সামনে থেকে সাংবাদিক কামাল তালুকদারের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের সিসি ঢালাই ভেঙে গিয়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
মোর্শেদা নামে এক বাসিন্দা বলেন, “বাবা, রাস্তা এত ভাঙা, হেঁটে আসতে পারি না, এমনকি রিকশাও যেতে চায় না।”
আট নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ মোক্তারের বাড়ি থেকে পিকু মৃধার বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার, গরুর বাজার থেকে লোছা বাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে গিয়ে সেগুলোও খানাখন্দে ভরে গেছে।
এভাবে আমতলী পৌরসভার মূল সড়কসহ পারিবারিক যাতায়াতের শত শত সড়ক সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
আমতলী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবুল হায়দার বলেন, “সংস্কারের জন্য সময়মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, “ভাঙা সড়কগুলোর তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |