২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার ৬:২০:১৮ অপরাহ্ন | ![]() ![]() ![]() ![]() |
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারে বাঁধের ঢালের মাটি খননযন্ত্র দিয়ে গভীর করে কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বাঁধসহ আশপাশের বাড়িঘর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ধসে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর বিলীনের শঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমতলী উপজেলার ৪৩/১ পোল্ডারের আব্দুল আজিজ তালুকদার ব্রিকফিল্ড থেকে আমড়াগাছিয়া হাইওয়ে পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং নাপিতবারি স্লুইস গেট থেকে চরখালী আবুল হাসেম মাস্টার বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারসহ মোট সাড়ে তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। টেন্ডারের মাধ্যমে খুলনার আমিন অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বরগুনার ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া। গত নভেম্বর মাসে বাঁধটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননযন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) দিয়ে মাটি কাটাতে গিয়ে বাঁধের পাশের অনেক জায়গায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে ঢালের মাটি কেটেছে। এতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া বাঁধের ঢালে বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। বৃষ্টি শুরু হতেই অনেক জায়গায় বাঁধের মাটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। এতে ভূমিহীন পরিবারগুলোর বসতঘর গভীর খাদে ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
শুক্রবার সকালে চাওড়া ইউনিয়ের উত্তর আমড়াগাছিয়া এবং কুকুয়া ইউপির চরখালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঢালের মাটি খননযন্ত্র দিয়ে এমন গভীর করে কাটা হয়েছে, যে কোনো সময় বাঁধের মাটি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে চাওড়া ইউপির উত্তর ঘটখালী বাঁধের ঢালে বসবাস করা মাসুদ সিকদারের বাড়িটিতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। বাড়িটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এ বাড়িটিতে অবস্থান করা মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন।
ভুক্তভোগী মাসুদ সিকদার বলেন, ‘মোগো কোনো জায়গাজমি নাই। সরকারি এই জমিতে বাপ-দাদার আমাল অইতে থাইক্যা আইছি। বাড়িতে এমনভাবে ফাটল ধরেছে যে, বাড়িতে পোলামাইয়া লইয়া রাইতে ঘুমাইতে ডর করে।’ একই গ্রামের প্রতিবেশী খালেক মাতুব্ববরের বাড়ির পেছনে ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটায় ওই বাড়িটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
উত্তর ঘটখালী গ্রামের খালেক হাওলাদার, আয়নালী হাওলাদার, ফারুক মৃধা, মনোয়ার হোসেন, আলাল উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর ঘরামী জানান, ১৯৬০ সালের শুরুতে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। পূর্বপুরুষদের বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তারা বাঁধের ঢালে সরকারি জমিতে বসবাস করে আসছেন। এখন বাঁধ সংস্কারে যেভাবে ঢালের মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে এখানে তাদের বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সিকদার ও আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, যেভাবে ঢালের মাটি কেটে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে বাঁধটি ধসে পড়তে পারে।
স্থানীয়দের আশঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দেন বাঁধ সংস্কারে নিয়োজিত সাব-ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ঢাল থেকে যেভাবে মাটি কাটা
হয়েছে, তাতে বাঁধের মাটি ধসে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের ভাষ্য, বাঁধের পাশে সরকারি জমির মাটি কাটা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ধসের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাঁধের ঢালের দুই পাশে ঘাস লাগিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুদীপ্ত চৌধুরী বলেন, বন্যার হাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য বাঁধটি সংস্কার করা হচ্ছে। মাটি ধসের হাত থেকে বাঁধটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |