আনন্দে ভাসছে রংপুর/তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণায় সাত দিনের কর্মসূচি
মাহির খান:
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে রংপুরের মানুষ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথাটি উঠে আসায় প্রাপ্তির আনন্দে ভাসছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা এবং তিস্তাপাড়ের মানুষ।
মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশ সফল হওয়ায় দারুণ চাঙা অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। স্বাধীনতার পর কোনো জনসভায় এত মানুষের সমাগম ঘটাতে পারেনি কোনো দল। রংপুরে এটাই সর্ববৃহৎ জনসভা। রংপুর বিভাগের আট জেলার নেতা-কর্মী ছাড়াও কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে এই জনসভায়।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে এই জনসভা খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ রংপুরের অনেক নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগে বিভক্তি ও দলীয় কোন্দল রয়েছে। নেতা-কর্মীদের আশা, শেখ হাসিনার আগমনে দলীয় কোন্দল মিটে যাবে, যা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে টনিক হিসেবে কাজ করবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাসেম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে রংপুরের মানুষকে ভালোবাসেন।
লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রংপুরের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাই আমরা এখন প্রাপ্তির আনন্দে রয়েছি। ’ এদিকে রংপুরের মানুষের দাবি ছিল তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করব।
’ প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় তিস্তাপাড়ের মানুষ অনেকটা আশান্বিত হয়ে উঠেছেন। তিস্তা নিয়ে যারা আন্দোলন করে আসছেন তারাও আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর কথায়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। একই সঙ্গে সাত দিনব্যাপী কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে পরিষদের পক্ষ থেকে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তিস্তা নদীর দুই তীর এবং জনপদের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত। আগামীকাল শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিস্তার দুই তীরের সব উপজেলার লোকালয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা, আনন্দ আড্ডা, সর্বজনের আনন্দ সংহতি সভা। সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী ও সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান তিস্তা অববাহিকার কোটি মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, শত প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের লাখো মানুষের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেছেন, ‘আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা আমরাই বাস্তবায়ন করব। ’
তার ঐতিহাসিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত হলো শত বঞ্চনায় নিষ্পেষিত উত্তর জনপদের কোটি মানুষের স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
নেতারা বলেন, ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে খুবই স্পষ্ট ও ইতিবাচক ঘোষণা হিসেবে মূল্যয়ন করছে। আশা করি দুই মাসের মধ্যেই, অর্থাৎ চলতি অর্থবছরই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন হবে। এখন আমরা চাই একনেকে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে কাজ শুরু হোক। ’
এদিকে সারা দেশে নারী ফুটবলারের গ্রাম হিসেবে পরিচিত রংপুরের পালিচড়া। এ গ্রামে রয়েছে সদ্যপুষ্কুরিণী যুব স্পোর্টিং ক্লাব। পালিচড়ায় মেয়েদের ফুটবল খেলার জন্য স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর মুখে পালিচড়া নাম উচ্চারিত হওয়ায় সেখানে বইছে আনন্দের বন্যা। ওই এলাকার লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
ওই ক্লাবের কোচ মিলন মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি পালিচড়ার মতো একটি গ্রামে নারীদের ফুটবলের উন্নয়নে একটি স্টেডিয়াম দিয়েছেন। ’
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শ্যামপুর সুগার মিলস চালুর আশ্বাস দেওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার মানুষ ও মিল-সংশ্লিষ্টরা। শ্যামপুর সুগার মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘শ্যামপুর সুগার মিল পুনরায় চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের আনন্দিত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
প্রধানমন্ত্রী রংপুরে ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।