আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস – DesheBideshe

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস – DesheBideshe



আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস – DesheBideshe

ঢাকা, ২৪ মার্চ – বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ। এবারের প্রতিপাদ্যের বিষয় ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি: প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, বিনিয়োগ করুন, বিতরণ করুন’।

জানা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে ৫.২ শতাংশ শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেশে শিশু যক্ষ্মা রোগী আছে ১০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২০২৪ সালে দেশে ৩১৩৬২৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আছে ৮৩ শতাংশ রোগী। বাকি প্রায় ১৭ শতাংশ রোগী এখনও রয়েছে শনাক্তের বাইরে।

শনাক্তের বাইরে থাকা এই রোগীরা যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আরও রোগী বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শনাক্তের বাইরে থাকা রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত দুই দশকে যক্ষ্মা প্রতিরোধ, পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থার মতো যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা তহবিল দিয়ে সহায়তা করেছে। তবে হঠাৎ করেই এই তহবিল কাটছাঁট করায় যক্ষ্মা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে এর প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে গবেষণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে। এ অবস্থায় সরকারকে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জোর দেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

সূত্র জানিয়েছে, ইউএসএআইডি এ অর্থায়নে আইসিডিডিআরবির প্রায় সাত থেকে আইটি প্রকল্প চলমান ছিল। এগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে যারা কাজ করতেন তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে যক্ষ্মার সক্রিয় রোগী সন্ধান, স্ক্রিনিং ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ করা হতো।

যেহেতু গত জানুয়ারিতে এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আগামী বছর যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১৭ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম না থাকায় দ্রুত গতিতে যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে। একই সঙ্গে বেশকিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল ইউএসএআইডির সহায়তায়। এগুলোর স্থগিত করেছে, যার ফলে নতুন চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন থমকে গেছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে এই সব প্রকল্প চলমান রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বা অন্য কোনো দাতা সংস্থাকে এসব প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত করতে হবে।

এদিকে গত নয় মাস থেকে স্বাস্থ্যের কোনো অপারেশন প্ল্যান নেই। অপারেশন প্ল্যান না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সেবা। অপারেশন প্ল্যানের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিও ছিল। যদি অপারেশন প্ল্যান চালু থাকতো ফলে বলায় যায় দেশ বড় ধরনের যক্ষ্মা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

ইউএসএআইডির সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকেও যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা প্রকল্প ছিল। গত জানুয়ারিতে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংস্থাটির যক্ষ্মা কর্মসূচির লিড টেকনিক্যাল ডা. ফারহানা নিশাত সেহেলী বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান গবেষণা প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। দুই মাসে তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ থাকলে প্রভাব পড়বেই

২০২১ সালে ইউএসএআইডির সহায়তায় রাজধানীর শ্যামলীতে দেশের প্রথম ওয়ান-স্টপ যক্ষ্মা (টিবি) সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। ইউএসএইড এর অর্থায়নে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারে একজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছিল। তিনি মূলত এমডিআরটিবি আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয় দেখতেন। অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে ওই চিকিৎসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।

ডা. আয়েশা বলেন, আমাদের হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার যক্ষ্মা রোগীদের সেবা চলমান। রোগীদের সেবা চলমান রাখতে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। তারাই সার্বিক চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বর্তমানে হাসপাতালে ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৫ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর টিবি) আক্রান্ত।

‘পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। ইউএসএইড’রঅর্থায়নে মূলত এমডিআর টিবি রোগীদের সেবার বিষয়টি দেখা হতো। এমডিআর টিবিতে আক্রান্তরোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। তারপরও যদি কোথাও সমস্যা মনে হয়, তাহলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু ওষুধের জোগান নিশ্চিত করতে পারলে খুব একটা সমস্যা হবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো যেহেতু ভালো তাই ইউএসএইড এর ফান্ড বন্ধ হওয়ার কারণে আফ্রিকান দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে তেমন প্রভাব পড়বে না। আমাদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় তেমন প্রভাব পড়বে না। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে প্রভাব পড়বে না। চিকিৎসার বড় দাতা যেহেতু গ্লোবাল ফান্ড তাই বড় সমস্যা হবে না। তাদের যে সহায়তা ছিল তা থাকলে আরো ভালো হতো। সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাদের কিছুটা রোল ছিল, এই জায়গায় অভাব হবে, সরকারি উদ্যোগে মানুষকে আরেকটু বেশি কাজ করতে হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ২৪ মার্চ ২০২৫



Explore More Districts