আইনের ঊর্ধ্বে জনগণের অন্তর: কাদের সিদ্দিকীর দূরদর্শী মন্তব্য – News Tangail

আইনের ঊর্ধ্বে জনগণের অন্তর: কাদের সিদ্দিকীর দূরদর্শী মন্তব্য – News Tangail

সম্পাদকীয়: সম্প্রতি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) তাঁর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকীর স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে যে মন্তব্য করেছেন, তা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়েছে যে, দল বা ব্যক্তির চেয়েও ঊর্ধ্বে দেশের স্বাধীনতা এবং জনগণের ইচ্ছাশক্তি।

কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, “আওয়ামী লীগ আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ হতে পারে, মানুষের অন্তরের দ্বারা না।” এই উক্তিটি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎকে নির্দেশ করে না, বরং এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষের আবেগ, বিশ্বাস এবং সমর্থন যেকোনো আইনি বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে আস্থা ও ভালোবাসা, তা কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এটি প্রমাণ করে যে, রাজনীতিতে জনগণের অন্তর্নিহিত সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি অত্যন্ত জোরালোভাবে বলেছেন, “স্বাধীনতা আমাদের, স্বাধীনতা বাংলাদেশের। স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের না, স্বাধীনতা বিএনপিরও না, স্বাধীনতা শুধু অধ্যাপক ইউনূসেরও না, স্বাধীনতা শুধু এনসিপিরও না। এটা দেশের স্বাধীনতা, দেশের মানুষের স্বাধীনতা।” এই কথাগুলো দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে গেঁথে থাকা উচিত। স্বাধীনতা কোনো নির্দিষ্ট দলের সম্পত্তি নয়, এটি প্রতিটি বাঙালির অর্জন। এই মন্তব্য বিভেদ ভুলে দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।

শেখ হাসিনার পতন প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেছেন যে এটি “ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পতন” এবং “আল্লাহর রহমতে দেশের জনগণের দ্বারা শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।” তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, “আমি যদি ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার মতো হই, শেখ হাসিনার চাইতেও বড় পতন আমার হবে। অন্য কেউ যদি করেন, তাঁরও পতন হবে।” এই মন্তব্য বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্যও একটি বড় বার্তা। যারা জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের অবশ্যই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ করতে হবে, নতুবা একই ভাগ্য তাদেরও বরণ করতে হতে পারে।

কাদের সিদ্দিকী বর্তমান নেতৃত্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “যেই মানুষের সাড়া পেয়ে তাঁরা বিজয় অর্জন করেছেন, তাঁরা যেন সেই মানুষের কথা ভাবেন। গত ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনার করা অন্যায়, তাঁরা ১৫ মাসে যদি করে বসেন, তাহলে তাঁদের মানুষ স্মরণ করবে না।” এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে এবং নতুনভাবে অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাদের সম্মান দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

সবশেষে তাঁর আহ্বান, “আর দলাদলি-হানাহানি না করে, প্রত্যেকটি মানুষকে সম্মান দিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দিন।” এই কথাটি কেবল রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নতির জন্য হানাহানি পরিহার করে একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি।

কাদের সিদ্দিকীর এই বক্তব্য একটি দূরদর্শী এবং চিন্তাভাবনা উদ্রেককারী বার্তা বহন করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের ক্ষমতা আইনের ধারায় নয়, বরং মানুষের অন্তরের গভীরে নিহিত।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

Explore More Districts