অরিন্দমের ৫০ বছর উদযাপন – দৈনিক আজাদী

অরিন্দমের ৫০ বছর উদযাপন – দৈনিক আজাদী

নাটক এমন এক শক্তিশালী পারফরমিং আর্ট, যা সমাজ পরিবর্তনে প্রেরণা যোগায়। নাট্যশিল্প এমন এক দীপ্যমান বাস্তবতা, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকেও আলোকিত করে। সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চট্টগ্রামের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের ভূমিকাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। এক্ষেত্রে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করে চলেছে অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়। নাটকের মধ্য দিয়ে সুন্দর মানুষ গড়তে চায় অরিন্দমের প্রতিটি কর্মী, যারা গড়তে চায় একটি সুন্দর পৃথিবী। অর্ধযুগ ধরে সৃষ্টিশীলতা আর মানবিকতার দায় কাঁধে নিয়ে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার এ সংগ্রামের এক অকুতোভয় বীরের নাম প্রয়াত সদরুল পাশা; যিনি ছিলেন অরিন্দমের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের ৫০ বছর উদযাপনের সূচনা লগ্নে গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন ‘সদরুল পাশা স্মারক সম্মাননা’ প্রদান করা হয় বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশের নাট্যান্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত নাট্যজন মঞ্চসারথী আতাউর রহমানকে। তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন ও বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সংবাদব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।

অরিন্দমের সভাপতি নাট্যজন আকবর রেজার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব সদরুল পাশার স্মৃতিচারণ করেন তাঁর ছোট ভাই বিশিষ্ট গীতিকবি আসিফ ইকবাল। মানপত্র পাঠ করেন অরিন্দম সদস্য কাজল সেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, জীবনটাই একটা নাটক; যার শুরু আর শেষ কোথায় আমরা জানি না। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সংস্কৃতি বিকাশে নাটকের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আর সেই নাট্য আন্দোলনে অরিন্দমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, বাঙালির বৈশিষ্ট্য, যখন সে বিদ্রোহ করে তখনই সে অসাধারণ। নাটক অত্যন্ত কঠিন, সত্যকে সে তুলে আনে। সেইজন্য নাটক সময়ের থেকে এগিয়ে থাকে। নাটক কখনো বঞ্চনা করে না।

বিশেষ অতিথি আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে, আতাউর রহমানের মতো একজন বন্ধুর সাথে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট হাইস্কুলে আমার শিক্ষাজীবন কেটেছে। নাট্য নির্দেশক আতাউর রহমান আমার বন্ধু; এটা আমার জন্য গৌরব ও অহংকারের বিষয়। সে একাধারে মঞ্চ ও টেলিভিশনের শক্তিমান অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, লেখক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কবি। স্কুল জীবন থেকেই একটু একটু করে সংস্কৃতি চর্চায় তার মনোনিবেশ ও বিকাশ। আতাউর একজন পরিশ্রমী নাট্যজন। নাটকের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দুটি পুরষ্কার পেয়েছে সে। প্রসঙ্গক্রমে আতাউরের পাশাপাশি দেশের নাট্যজগত তথা সংস্কৃতি জগতে আমার প্রিয় আরও দুজন মানুষের নাম বলতে চাই। একজন নাট্যব্যক্তিত্ব প্রয়াত আলী যাকের এবং অন্যজন আসাদুজ্জামান নূর। আজ তার এই গৌরবের দিনে প্রিয় বন্ধু সমাজকে আরও আরও আলোকিত করুকএই কামনা করি।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মঞ্চসারথী আতাউর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম আমার প্রথম বাড়ি। আমি সাংঘাতিকভাবে চট্টগ্রামের কাছে ঋণী। এইখানে যা শিখেছি, বাকি জীবনে তা আর কোথাও শিখিনি। এখানে এ পুরষ্কারটা নিতে এসেছি, কারণ এখানে হৃদয়ের স্পর্শ আছে। তিনি বলেন, নাটক জীবনের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে জানে। সদরুল পাশার সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, বলা চলে আত্মীয়তার বন্ধন। চট্টগ্রামে থেকে আমি মানুষ হতে পেরেছি কিনা জানি না, তবে অমানুষ হইনি। আমার আত্মজীবনীতে চট্টগ্রামের অবদানের কথা থাকে সর্বাগ্রে এবং সবচেয়ে বেশি। নতুন নাট্য নির্মাতা, অভিনেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রাপ্তির আশায় না করে, মনের আনন্দে কাজ করার মাঝেই প্রকৃত আনন্দ লুকায়িত।

সদরুল পাশার ছোট ভাই গীতিকবি আসিফ ইকবাল স্মৃতিচারণ করে বলেন, ভাইয়া কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় বিএনসিসি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধুদের নিয়ে সেই বিএনসিসির রুমে হানা দিয়ে প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত অস্ত্র লুট করে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ছিলেন এক নম্বর সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার। যুদ্ধ পরবর্তী থিয়েটার চর্চায় প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। তিনি সময়ের আগে জন্মেছিলেন। আমি আশা করি অরিন্দম নাট্যচর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

নাট্যজন শিশির দত্ত বলেন, বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস লিখতে গিয়ে চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অরিন্দমের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আমরা তরুণ প্রযোজকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করবো। ইচ্ছে আছে ৫০ বছর উপলক্ষে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট নাট্যকর্মীকে নিযে এসে সম্মাননা জানানোর। অরিন্দমের পুরনো নাটকগুলোর পুনঃমঞ্চায়নের ব্যবস্থা করাসহ নানাবিধ পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। দ্বিতীয় পর্বে পঞ্চকবির গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতমিল্পী মধুলিকা মন্ডল।

Explore More Districts