অভিযানেও কমছে না পেঁয়াজের দাম, বিপক্ষে চেম্বার সভাপতি

অভিযানেও কমছে না পেঁয়াজের দাম, বিপক্ষে চেম্বার সভাপতি

অভিযানেও কমছে না পেঁয়াজের দাম, বিপক্ষে চেম্বার সভাপতি

প্রশাসনের অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না পেঁয়াজের বাজার। ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর পেঁয়াজের দাম শনিবার (৯ ডিসেম্বর) একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুনের বেশি বেড়ে যায়। হঠাৎই গুদাম থেকে উধাও হয়ে যায় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করে। কিন্তু প্রশাসনের অভিযানেও সুফল মিলছে না।

রবিবার (১০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এদিকে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ পেঁয়াজের আড়তে প্রকাশ্যে পেঁয়াজের মজুতও দেখা যায়নি। পাইকারি বাজারে সরবরাহ ছিল কম। মিনি ট্রাকে করে অল্প কিছু পেঁয়াজ এলেও সব আড়তে পেঁয়াজ ওঠেনি।

রবিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তদারেরা বলেছেন, বাজারে ক্রেতা প্রায় নেই। যারা আসছেন, তারাও দাম শুনে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও ক্রেতার সংখ্যা কম।

ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরপরই বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সময়েই বলা হয়েছে, এসব অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। যদিও সবাই রাতারাতি কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকারও বেশি দাম বাড়ানোর ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যায়িত করছেন। স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তাসহ খুচরা ব্যবসায়ীদেরও প্রশ্ন– বাজার থেকে পেঁয়াজ কেন উধাও হবে? পেঁয়াজ রপ্তানি না করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কেন দাম বেড়ে যাবে? তাহলে আগের দামে কেনা বা আমদানি করা পেঁয়াজ কেন বাড়তি দামে বিক্রি করা হবে? এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী সংগঠন দিতে পারেনি। এদিকে পেঁয়াজের সংকট তৈরির সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। কোনো আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুদ কিংবা এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ালে জেলা প্রশাসন মজুদ করা পণ্য জব্দ করতে পারে। পেঁয়াজের সংকট তৈরির সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। আড়ত এবং বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা, পণ্য জব্দ, আড়ত-দোকান সিলগালাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পেঁয়াজের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সাথে বসে তাদের মতামত, পরামর্শ, যুক্তি উপস্থাপন করবে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে এসব অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়াকে প্রকান্তরে তাদের প্রশ্রয় দেয়ার শামিল বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার নেপথ্যে যে সিন্ডিকেটকে বিভিন্ন সময় চিহ্নিত করা হয়েছিলো, তাদের শাস্তি না দেয়ার কারণে এবারও পেঁয়াজের দাম নিয়ে নয়-ছয় করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।

অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া পণ্যের দাম কমাতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ ভোরের কাগজকে বলেন, ঘোষণার পরপরই একদিনের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় একটি পণ্যের দাম দ্বিগুনেরও বেশি হয়ে যাওয়াটা- নিঃসন্দেহে ব্যবসায়ীদের কারসাজি। অসাধু ব্যবসায়ীরা রাতারাতি পেঁয়াজের মজুদ উধাও করে ফেলা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলার শামিল।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কখনই এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি সাপোর্ট করে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। কারা এইসব কারসাজি করছে তা বের করা খুব কঠিন কিছু নয়। পেঁয়াজ আমদানিকারক কারা, কী পরিমান পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, তা বন্দর-কাস্টমসের নথি দেখলেই বোঝা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু বাজারে বাজারে গিয়ে গরীব ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা সমীচীন নয়। ভ্রাম্যমান আদালতের নামে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করা আমি সাপোর্ট করিনা। গুটিকয়েক আমদানিকারক ও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য সকল ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা উচিত নয়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যেও অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই না। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টি সরকার ও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে। পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়মিত এটা মনিটরিং করতে হবে।

এদিকে শনিবার ও রবিবার পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই এবং পাহাড়তলী পাইকারি বাজার ও আড়তে। রবিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুকের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এসময় নানা অভিযোগে ২ টি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশি দামে কেনার কারণে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাইকারি বাজার থেকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আড়তদারদের জরিমানার পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক করে দেন। অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, বাজারে বিভিন্ন দোকানে জরিমানা করার পাশাপাশি মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও সরবরাহ কমার অজুহাতে যাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পরে সেই বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে এবং নিয়মিত মনিটরিং করা হবে জানা গিয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

Explore More Districts